কে এম বাবুল, ব্যুরো চিফ রংপুরঃ গাইবান্ধা সদর থানার এসআই ছানোয়ার, এএসআই নুরুন্নবী ও এএসআই রুবেলের বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তরের ‘আইজিপি’র কমপ্লেইন সেলে’ লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার(১৩ জুন) দুপুরে ডাকযোগে এ অভিযোগ করা হয়। অভিযোগে রাস্তায় স্যালো ইঞ্জিন চালিত অটো আটকিয়ে টাকা দাবি ও ব্যবসায়ীকে লাথি মেরে থানায় নেওয়া এবং সাংবাদিকদের সাথে অসাদাচারনের কথা উল্লেখ করা হয়। গাইবান্ধা সদর থানায় অপমানের শিকাড় গাইবান্ধা প্রেসক্লাবের গাইবান্ধা সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট জাভেদ হোসেন এ অভিযোগ করেন।
আইজিপির দপ্তরে করা অভিযোগে বলা হয়, ১১ জুন সন্ধ্যার পর গাইবান্ধা সদর থানা পুলিশ একটি স্যালো ইঞ্জিন চালিত ভটভটি ও কিছু ক্রয়কৃত পুরাতন ব্যাটারি তুলসিঘাট এলাকা থেকে থানায় নিয়ে আসে। এ সময় আলী নামের একজন পুরাতন ব্যাটারী ব্যবসায়ী ফোন করে সাংবাদিক জাভেদ হোসেনকে থানায় আসার জন্য অনুরোধ করে। জাভেদ হোসেন বিষয়টি জানার জন্য আলীর ফোনটা সদর থানার ডিউটি অফিসারকে দিতে বলে। প্রথমে ডিউটি অফিসার ফোনটি নিতে অপরগতা প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে ফোনটি নিয়ে তিনি সাংবাদিক জাভেদের সাথে কথা বলেন। ডিউটি অফিসারের দায়িত্বে থাকা এস আই ছানোয়ারের নিকট কি কারনে পুরাতন ব্যাটারিগুলো থানায় নিয়ে আসা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি ব্যবসায়ী আলীর উপর প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়। যা জাভেদ হোসেন মোবাইল ফোনে শুনতে পায়। এক পর্যায়ে সাংবাদিক জাভেদ হোসেনকে কোন তথ্য দিতে পারবেন না বলে মোবাইল ফোনটি এসআই ছানোয়ার আলীর দিকে ছুঁড়ে মারেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, এঘটনায় প্রেসক্লাব গাইবান্ধার সভাপতি খালেদ হোসেন, সিনিয়র সহ-সভাপতি রবিন সেনের সাথে আলোচনা করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি শেখ রোহিত হাসান রিন্টু, নিরাপদ চিকিৎসা চাই এর সুমনসহ একটি প্রতিনিধি দল থানায় গিয়ে ওসি তদন্ত ও ওসি ইনচার্জকে না পেয়ে দায়িত্বরত একজন পুলিশ কন্সস্টেবলের কাছে জানতে পারে পুরাতন ব্যাটারীগুলো এএসআই নুরুন্নবী ও এএসআই রুবেল নিয়ে এসেছেন। তারা আরও জানতে পারে ব্যাটারী ব্যবসায়ী জুয়েলকে মারধর করে থানায় ভিকটিম রুমে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সাংবাদিক জাভেদ থানা থেকে নাম্বার নিয়ে এএসআই নুরুন্নবীকে ফোন দিলে তিনি তাকে থানার ভিতরে পুলিশ ক্লাবে ডেকে নেন। পুলিশ ক্লাবে গিয়ে ব্যাটারী ও ব্যাটারী ব্যবসায়ীকে কেন ধরে নিয়ে এসেছেন এমন প্রশ্ন করলে এএসআই নুরুন্নবী উগ্র মেজাজে বলেন, ভটভটি চালককে ডাকেন। তার কথামত ভটভটি চালককে ডাকলে তিনি ভটভটি চালকের কাছেই বিষয়টি শুনতে বলেন। ভটভটি চালক আরিফ ইসলাম ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে যখন ২০ হাজার টাকা দিলে ছেড়ে দেব বলেছে তখন এএসআই নুরুন্নবী ও এএসআই রুবেল উত্তেজিত হয়ে ভটভটি চালককে ধাক্কা মারেন। এবং বলেন আপনাদের যা যা শোনার ওসির কাছে শোনেন আর যা পারেন করেন। এএসআই দের এমন অসৌজন্যমুলক আচরনে সাংবাদিক জাভেদ সহ সকলে মর্মাহত হয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে এসে ওসি ইনচার্জ মাসুদুর রহমানের কাছে ফোন দিয়ে সমস্ত বিষয়গুলো অবহিত করেন। ওসি কথাগুলো শুনে জাভেদকে বলেন খারাপ আচরনের ব্যাপারটা আমি দেখবো আর ব্যাটারীর বিষয়গুলো যাচাই বাচাই করে দেখা হবে। এরপর রবিন সেনসহ জাভেদ হোসেন, ব্যাটারি ব্যবসায়ী আলী, ভটভটি চালক আরিফ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি শেখ রোহিত হাসান রিন্টু, নিরাপদ চিকিৎসা চাই এর সুমন সবাই থানা থেকে বেড়িয়ে এসে প্রেসক্লাবে জুরুরী মিটিং এ বসেন। জেলার সাংবাদিকদের নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবারও তারা থানায় যায়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়,, সে সময় থানায় ওসি তদন্ত ওয়াহেদুল ইসলামকে পেয়ে তার রুমে বসে সম্পূর্ন বিষয়গুলো তাকে জানায়। উত্তরে তিনি বলেন এইসব বিষয় নিয়ে আপনারা ওদেরকে বলবেন কেন? আমাকে বলবেন। আর সব বিষয় নিয়ে আপনারা আসেন কেন? আমি ওসি তদন্ত কে পুলিশের অসৌজন্যমুলক আচারনের প্রতিবাদ জানাই এবং বিচারের দাবি করি। তিনি আমার বিষয়টি হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, আপনারা তো সব সময় পুলিশের দোষ ধরেন। ব্যাটারীর বিষয়টি আমাকে রংপুর থেকে এসপি আকতার স্যার ফোন দিয়েছিল, আমরা যাচাই বাচাই করে ব্যাটারীগুলো কি করা যায় সিদ্ধান্ত নেব। আমরা তার প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে আবারো থানা ত্যাগ করি এবং শেষবারের মতো রাত ১২ টার পর থানায় গিয়ে ওসি ইনচার্জ মাসুদুর রহমানের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করি। তার কাছেও ব্যাটারী এবং পুলিশের অসৌজন্যমুলক আচারনের আশানুরুপ কোন কিছু না পেয়ে আমরা থানা থেকে বেড়িয়ে পড়ি । পরদিন, ১২ জুন ২০২৩ ইং সকালে প্রেসক্লাব গাইবান্ধায় এক জরুরী সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রেসক্লাব গাইবান্ধার সাধারণ সম্পাদক জাভেদ হোসেন আইজিপির নিকট এই অভিযোগ দায়ের করেন।
এ ব্যাপারে গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি তদন্ত) ওয়াহেদুল ইসলাম বলেন, আমি যতদুর জানি ব্যাটরীগুলো মালিককে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরে অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছু জানিনা।
এ ব্যাপারে প্রেসক্লাব গাইবান্ধার সাধারন সম্পাদক জাভেদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) সবসময় বলে থাকেন পুলিশ ও সাংবাদিকদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। আমি মনে করি সাংবাদিকদের সাথে এমন অসৌজন্যমূলক আচরণ তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া। আমি সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি তদন্ত থেকে বিষয়টি জানিয়ে প্রতিকার চেয়েছিলাম তারাও এবিষয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কথা বলেছে। আমি একটি বিশ্বাস নিয়ে আইজিপির দ্বারস্থ হয়েছি আমি মনে করি তিনি এটার যথার্থ বিচার করে সাংবাদিকদের সাথে পুলিশের ঐক্য রাখতে জোরালো ভূমিকা রাখবেন।