ফজলে রাব্বী,নলডাঙ্গা (নাটোর) থেকেঃ গ্রাম-বাংলার বিলে-ঝিলে ও ডোবা-নালায় শাপলা ফুলের সমারোহ ছিল চোখে পড়ার মতো। বর্ষা থেকে শরতের শেষ পর্যন্ত নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয়ের নিচু জমিতে এমনিতেই জন্মাত প্রচুর শাপলা-শালুক ও ঢ্যাপ। অনেকেই এই সব তাদের খাদ্যের তালিকায় রাখত। শিশুরা তো বটেই সব বয়সের মানুষ রঙ-বেরঙের শাপলার বাহারি রুপ দেখে মুগ্ধ হতেন। এ সময় শাপলা ভরা বিলের মনমাতানো সৌন্দর্যে চোখের পলক ফেলা যেনো মুশকিল।
উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জলাশয় থেকে বিলুপ্ত প্রায় শাপলা ফুল। নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর শাপলার প্রতি আকর্ষণ সবার চেয়ে বেশী। বর্ষা মওসুমের শুরুতে এ ফুল ফোটে।খাল- বিল-জলাশয় ও নিচু জমিতে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয় শাপলা। আবহমান কাল থেকে শাপলা মানুষের খাদ্য তালিকায় সবজি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এক সময় খালে-বিল ও বদ্ধজলাশয় বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন প্রজাতির শাপলা দেখা যেতো। ছোটদের কাছে শাপলা ফুল একটি প্রিয় খেলনার পাশাপাশি অনন্ত সৌন্দের্য্যর আকর্ষণ।
নাটোরের নলডাঙ্গার সরকুতিয়া গ্রামের আরিফুল ইসলাম বলেন,শাপলা ফুল বাংলার সাংস্কৃতিতে এক অনন্য রুপ। শাপলাকে রক্ষা করা,বাঙ্গালী হিসেবে আমাদের নৈতিক দ্বায়িত্ব।
উপজেলার মাধনগর গ্রামের কামাল হোসেন বলেন,বর্তমান সভ্যতায় বাড়তি জনগণের চাপের কারণে আবাদি জমি ভরাট করে বাড়ি, পুকুর, মাছের ঘের বানানোর ফলে বিলের পরিমাণ কমে গেছে। যার কারনে শাপলা জন্মানোর জায়গাও কমে আসছে।
উপজেলার বাঁশভাগ গ্রামের রবিউল ইসলাম বলেন,বর্ষার শুরুতে সকালে বিভিন্ন স্থানে শাপলার বাহারী রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত। এসব দৃশ্য চোখে না দেখলে বোঝানো যাবে না। অনেকে আবার শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য হওয়ায় এলাকার লোকজন শাপলা তুলে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে বিক্রি করতো।
নাটোর সদর উপজেলার ইয়াচিনপুর কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ সাজেদুর রহমান (৪৬) বলেন,শাপলা খুব পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি,ঔষধি কাজে ব্যবহৃত হয়। চলনবিলসহ বিভিন্ন বিলে অতিরিক্ত পুকুর খনন,কৃষি জমিতে স্থাপনা নির্মানের ফলে,শাপলা আজ বিলুপ্তির পথে। ঐতিহাসিক কাল থেকেই শাপলার ফল (ঢ্যাপ) দিয়ে চমৎকার সুস্বাদু খৈ তৈরি হয়।
মাটির নিচের মূল অংশকে শালুক বলে।
শাপলা ফুল রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আশা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
নাটোরের পরিবেশবাদী সংগঠনের সবুজ বাংলার বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হুমাউন রশিদ বলেন,শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। শাপলা আসলে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া ফুল,কোন রকম পরিচর্যা ছাড়াই বিল ঝিলে জন্ম নেয়,অপরুপ সৌন্দর্যময় এই শুভ্র ফুলটি। শাপলা আসলে কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে,যার মধ্যে সাদা ফুল বিশিষ্ট শাপলাটি অনেকেই সবজি হিসেবে খেয়ে থাকে।
জাতীয় ফুল শাপলা সাধারণত আবদ্ধ অগভীর জলাশয়,খাল-বিলে জন্মে থাকে। অনেক স্থানে
ফোঁটার কারণে চারিদিকে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্যে পরিণত হতো। গ্রামবাংলার আনাচে কানাচে অহরহ দেখা যেত জলে ভাসা ফুলটি। তবে এখন অযন্ত্র আর অবহেলায় জাতীয় ফুল শাপলা হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সকালে অথবা চাঁদনি রাতে বিল,ঝিল বা জলাশয়ে ফুলটি যখন অনেক ফুটে থাকে,তখন সেখানে এক অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশন (বিবিসিএফ) এর দপ্তর সম্পাদক ফজলে রাব্বী জানান,বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন এলাকায় খাল-বিল, জলাশয় ও নিচু জায়গায় পানি জমা থাকলে সেখানেই প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয় আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা। দিন দিন দেশের বিল-ঝিল-খাল-নদী দখল, ভরাট,জমিতে অতি মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে শাপলাফুল।
ফজলে রাব্বী,নলডাঙ্গা,নাটোর