প্রিয় বন্ধুগণ, চা শ্রমিকদের নায্য মজুরী আদায়ের জন্য সম্প্রতি যে ঐতিহাসিক আন্দোলন হয়েছে, তা চা শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধতা এবং সংগ্রামী চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। কিন্তু, অতন্ত দূঃখ ও
পরিতাপের বিষয় বর্তমান চা শ্রমিক নেতৃত্বের দেওলিয়াত্ত এই আন্দোলনের মাধ্যমে আরও
পরিস্কার হয়ে ফুটে উঠেছে। আন্দোলন ধর্মঘটে সংগ্রামী চা শ্রমিকদের দৃঢ় অবস্থান,আপোষকামী
নেতাদের সকল চক্রান্ত ভেদ করতে সক্ষম হয়েছে। এইসব নেতারা অতীতের মতো সাধারন
শ্রমিকদের আন্দোলনে নামিয়ে আন্দোলনকে ব্যবহার করে মালিকপক্ষের সাথে আপোষরফা
করে নিজেদের আখের গুছানোর প্রয়াসে লিপ্ত ছিলো। আন্দোলনে আপনাদের দৃঢ় অবস্থান তা
ব্যর্থ করে দিয়েছে। আপনারা দেখেছেন, এক পর্যায়ে ঐ সকল আপোষকামী দূর্নীতিবাজ ব্যর্থ
নেতৃত্ব সাধারন চা শ্রমিকদের ধাওয়া খেয়ে বাগানছাড়া হয়েছিলো। আবারো তারা সুযোগ বুঝে
ইউনিয়নের নেতৃত্ব নিজেদের হাতে রেখে নানাবিধ বিভ্রান্তিমূলক কথা বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
সাথীবন্ধুরা, আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যে আমাদের নেত্রী, এই আন্দোলনে তা আবারো প্রমানিত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন ফলপ্রসু হয়েছে। আমাদের দৈনিক মজুরী একসাথে ৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ১৭০ টাকা হয়েছে। আমরা চা শ্রমিকেরা
সকলেই আওয়ামী লীগের সমর্থক হলেও বর্তমান দূর্নীতিবাজ নেতারা ২০০৬ সালে বিএনপির
সাহায্যে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন দখল করেছিলো। সে কারণেই তারা আওয়ামী লীগের
আমলে ভূমির অধিকার, চাকুরীর কোটা, সরকারী হাসপাতাল কিছুই আদায় করতে পারেনি।
ট্রেড ইউনিয়নের নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি দুই বছর অন্তর অন্তর মালিকপক্ষের সাথে বসে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে চা শ্রমিকদের মজুরী সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়।
বর্তমান দূর্নীতিবাজ, সুবিধাবাদী নেতৃত্ব যোগ্যতার অভাবে চুক্তি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। আমাদের
বকেয়া টাকা সহ অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত হচ্ছেনা।
বর্তমান ব্যর্থ নেতৃত্ব বিভিন্ন বিষয়ে আপোষকামীতায় ব্যস্থ। বাংলাদেশ প্রচলিত শ্রম আইন অনুযায়ী মেয়াদউত্তীর্ণ কমিটি মালিকপক্ষের সাথে কোন চুক্তিই করতে পারবেনা। আমরা সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে এ সম্পর্কে অবহিত করেছি। বর্তমানে বাংলাদেশের সকল চা শ্রমিকদের
কল্যাণের জন্য এই দূর্নীতিগ্রস্থ, ব্যর্থ নেতৃত্বকে উৎখাত করা একান্তই প্রয়োজন হয়ে দাড়িয়েছে।
আসুন আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিম্নলিখিত কাজের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ চা শ্রমিক
ইউনিয়নের সঠিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রসর হই। শ্রম আইন অনুযায়ী মেয়াদউত্তীর্ণ কমিটি কোন চুক্তিই করতে পারবেনা। তাই আমরা আমাদের বকেয়া টাকাও আদায় করতে পারবোনা। সরকার এবার চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে কোন অর্থ বরাদ্দ দিবেনা। আর আমাদের দেয়া চাদার টাকা নেতারা লুটপাট করে শেষ করে দিয়েছে। এ অবস্থায় অবিলম্বে নির্বাচনের জন্য জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই।
আমাদের অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে দূর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ ও অর্থ দিয়ে
বর্তমান নেতৃত্ব, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন এর নির্বাচনে সরকারী কর্মকর্তাসহ নির্বাচন
কমিশনকে প্রভাবিত করে নিজেরা ক্ষমতায় থেকে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে। এ কারণে,
আগামী চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে খুব শীঘ্রই জোরদার
আন্দোলনের মাধ্যমে এডহক কমিটি গঠন করে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরী করতে হবে। সারা বাংলাদেশের চা শ্রমিকদের নিয়ে এক চা শ্রমিক সমাবেশ এর আয়োজন করা।
মহাসংগ্রাম, চা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ও সংগ্রাম কমিটির কিছু সচেতন নেতৃত্ব নিয়ে চা শ্রমিক
ঐক্যজোট গঠন করে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্ধন্ধিতা করা। পরিশেষে বাংলাদেশে বসবাসরত দরিদ্র চা শ্রমিকদের জন্য কল্যানকর নেতৃত্ব নিশ্চিত করার জন্য আমাদের মাঝে বিরোধ কমিয়ে, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলে, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নকে কার্যকর ও কল্যানমুখী সংগঠন হিসাবে গড়ে তোলার প্রয়াসে আপনাদের
সহযোগিতা ও সমর্থন কামনা করছি।
প্রচারেঃ বাংলাদেশের সাধারন চা শ্রমিকবৃন্দ।