আল আমিন হাসান, জামালপুর ( ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ র্যাব-১৪, সিপিসি-১ জামালপুর এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কুড়িগ্রাম জেলার দুশমারা ও রৌমারী থানা এলাকা হতে আসামীদ্বয়কে গ্রেপ্তার করেছে ।
গ্রেপ্তারকৃত আসামি মোঃ সবুজ মিয়া (১৯) ও মোঃ আবুল কাশেম এর কাছ থেকে ১টি মোবাইল ফোন (সীমসহ) ও নগদ – ৫০০/- টাকা উদ্ধার করা হয়েছে ।
উক্ত মামলার বাদী মোঃ আশরাফুল ইসলাম (৩৩), পিতা-মোঃ বাচ্চু মিয়া, সাং-বাঘারচর বেপারীপাড়া, থানা-দেওয়ানগঞ্জ, জেলা- জামালপুর গত ০৯/০৯/২০২৩ ইং তারিখ সকাল বেলা সাংসারিক বাজার করার জন্য বাঘারচর বাজারের উদ্দেশ্যে রওয়া হয় । তখন বাদীর মেয়ে ভিকটিম নুসরাত জাহান হাবিবা (৪) বলে যে, তাকে বাজার থেকে মজা (খাবার) কিনে দিতে । তখন ভিকটিমকে সাথে নিয়ে বাড়ীর দক্ষিণ পাশের জনৈক শফিজল (৬০), পিতা-মৃত ছমির উদ্দিন এর দোকান হইতে ০২ (দুই)টি সিংগারা কিনে দিয়ে সকাল অনুমান ০৮.০০ ঘটিকার সময় ভিকটিমকে বাড়ীর উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিয়ে বাদী বাঘারচর বাজারে চলে যান ।
ঐদিন সকাল অনুমান ১১:০০ ঘটিকার সময় বাদী বাজার করে বাড়ীতে আসে। বাড়ীতে আসার পর বাদীর স্ত্রী মোছাঃ হীরা আক্তার (২৮) তাকে জিজ্ঞাস করে যে, নুসরাত কোথায়? তখন বাদী মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেন নুসরাতকে (ভিকটিম) শফিজল এর দোকান থেকে সিংগারা কিনে দিয়ে সকাল অনুমান ০৮:০০ ঘটিকার সময় বাড়ীর উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিয়ে বাঘারচর বাজারে চলে যাই ।
অতঃপর তারা বুঝতে পারেন যে, ভিকটিম বাড়ীতে আসে নাই। পরবর্তীতে বাদীসহ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের নিয়ে আশে-পাশের জঙ্গল, পুকুর, ডোবা, নালায় ও প্রতিবেশীদের বাড়ীতে খোঁজাখুঁজি করে। খোঁজাখুঁজি করে কোথাও না পেয়ে গত ১০/০৯/২০২৩ ইং তারিখে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরী করেন।
অপরদিকে একই থানার ডাংধরা পারোহারি গ্রামের আবুল কাশেম @ শিয়াল এর ছেলে ট্রলির হেলপার সবুজ (২২) বাজারে বলাবলি করে তার ট্রলি চালক রুবেল (৩৩), পিতা-আব্দুর রাজ্জাক, সাং-নিমাইমারী তাকে বলেছে ১,৫০,০০০/- (এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা দিলে রুবেল নুসরাতকে (ভিকটিম) ফেরৎ দিতে পারে যা মোবাইলে রেকর্ড করা হয়। গত ১১/০৯/২০২৩ ইং তারিখ সকাল অনুমান ০৫:৩০ ঘটিকার সময় নুসরাতের (ভিকটিম) মা ঘর থেকে বের হয়ে বাড়ীর আঙ্গিনায় ভিকটিমের মৃত দেহ দেখতে পেয়ে ডাক চিৎকার শুরু করেন।
তখন বাদীসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত এলাকার লোকজনদের সহায়তায় ভিকটিম নুসরাত জাহান হাবিবা (৪) এর লাশ সনাক্ত করে স্থানীয় থানা পুলিশকে অবহিত করলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে ভিকটিমের সুরতহাল শেষে ময়না তদন্তের জন্য জামালপুর সদর হাসপাতালে মর্গে প্রেরণ করেন এবং রুবেলকে আটক করে।
উক্ত ঘটনা নিয়ে ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ১২/০৯/২০২৩ ইং তারিখ ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে অভিযোগ দাখিল করলে অফিসার-ইন-চার্জ, জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ থানার মামলা নং-৮/১৮৩, তারিখঃ ১২/০৯/২০২৩ ইং, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি অপহরণসহ হত্যা মামলা রুজু করেন। উক্ত ঘটনার পর র্যাব-১৪, সিপিসি-১, জামালপুর ক্যাম্পের প্রতিনিধি উক্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ছায়া তদন্ত শুরু করে আসামী গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যহত রাখে।
বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে আসামীদ্বয়কে চিহ্নিত এবং অবস্থান নিশ্চিত করে উক্ত ঘটনার মামলা দায়ের ৬ (ছয়) দিনের মধ্যে গত ১৭/০৯/২০২৩ ইং তারিখ দুপুর অনুমান ১৫:০০ ঘটিকায় র্যাব-১৪, সিপিসি-১, জামালপুর ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার আশিক উজ্জামান এর নেতৃত্বে র্যাবের একটি আভিযানিক দল কুড়িগ্রাম জেলার রাজিপুর থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে পলাতক আসামী ১। মোঃ সবুজ মিয়া(১৯), পিতা-কাসেম মিয়া, সাং-কদমতলা(দানগড়া), থানা-দেওয়ানগঞ্জ, জেলা-জামালপুরকে তার আত্মীয়র বাড়ী হইতে আটক করতে সক্ষম হয় এবং তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উক্ত হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ২। মোঃ আবুল কাসেম (৪২), পিতা-মৃত হাফেজ শেখ, সাং-নয়ারচর গোয়ানপাড়া, থানা-দুশমারা, জেলা-কুড়িগ্রাম’কে অদ্য ১৮/০৯/২০২৩ ইং তারিখ অনুমান রাত ০১:১০ ঘটিকার সময় কুড়িগ্রাম জেলার দুশমারা থানা এলাকা হতে আটক করতে সক্ষম হয়।
গ্রেপ্তারকৃত আসামী মোঃ সবুজ এর ভাষ্য মতে, গত ০৯/০৯/২০২৩ ইং তারিখে ভিকটিম নুসরাত জাহান হাবিবা (৪)কে তার বাড়ী যাওয়ার রাস্তায় পেয়ে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তারা শিশুটির সুলভ আচরণ ও সরল বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে অত্যান্ত সু-পরিকল্পিতভাবে কৌশলে ভিকটিমকে কোলে করে পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে নিয়ে যায়। অতঃপর ভিকটিমকে মুখ চেপে ধরে নির্মমভাবে প্রহার করে। পরবর্তীতে মোঃ আবুল কাশেম ভিকটিমের শরীরে ছোট পানির বোতলে ব্যাটারীর পানি ভরে পানির পাইপ দিয়ে ভিকটিমের শরীরে ঢেলে দেয় এবং ভিকটিমকে পুকুরে ফেলে দিয়ে কঁচুরীপানা দিয়ে ঢেকে দেয়।
পরের দিন অর্থ্যাৎ গত ১০/০৯/২০২৩ ইং তারিখে রাত অনুমান ০৩:০০ ঘটিকার সময় ভিকটিমের বাড়ীর আঙ্গিনায় রেখে চলে যায়। বাড়ীর আঙ্গিনায় রেখে যাওয়ার কারন জানতে চাইলে তারা বলেন যে, যাতে করে কারো সন্দেহ না হয় উক্ত হত্যাকান্ডটি পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। ধৃত আসামী মোঃ সুবজ মিয়া এই অমানবিক ও লোমহর্ষের ঘটনার বর্ণনা দেয়। উক্ত হত্যাকান্ডটি পূর্ব শত্রুতার জেরে করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আটককৃত আসামীদ্বয়কে জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ থানায় সূত্রোক্ত মামলা মোতাবেক মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে ।