দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে সহিংস হয়ে উঠছে বুড়িমারী স্থলবন্দর

0
109

ইউ আর নুরনবী হোসেন রাজ, লালমনিরহাট থেকেঃ উত্তরের লালমনিরহাট জেলাধীন পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরে দীর্ঘদিন ধরে চলা শ্রমিকদের নানা দাবির আন্দোলনে নতুন করে যুক্ত হয়েছে সর্দার গ্রুপ ও শ্রমিক নেতা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সাজ্জাদ গ্রুপের দ্বন্দ্ব।

যদিও শ্রমিকদের আন্দোলন কিছুটা হ্রাস পেয়েছে বিপরীতে দুই গ্রুপের নতুন ইস্যুতে দ্বন্দ্ব প্রায় রুপ নিয়েছে সংঘাতে। ফলে বন্দরের পরিবেশ দিনের পর দিন অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। আবারও বন্ধ হয়ে যেতে পারে বুড়িমারী স্থলবন্দরের কর্যক্রম।

জানা যায়, এরকম পরিস্থিতি দেশের অন্য কোনো বন্দরে এতোটা বিরাজ করেনি। বৃহত্তম এই বন্দরে উভয়ের দ্বন্দ্বে শ্রমিকদের হাতে যখন দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়। এখন এর ব্যবস্থাপনা ও গ্রুপিংয়ে সহিংসতা কতটা চরম আকার ধারণ করতে পারে তা সহজে অনুমান করা যায়। স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীরাও চরম হতাশায় আছে বলে জানান তারা।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, যে কোনো সময়ে উভয়ের সংঘর্ষে প্রানহানির মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। কেন না, চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি শ্রমিক নেতা সাজ্জাদ হোসেনের সংবাদ সম্মেলনের দু’দিন পর প্রতিবাদ জানিয়ে সর্দার গ্রুপের সংবাদ সম্মেলন শেষ হতে না হতেই বুড়িমারীর সিরিয়াল ঘর নামক জায়গায় লাঠি সোটাসহ দেশীয় অস্ত্রে সর্দার গ্রুপের লোকজনকে চরম উত্তেজিত অবস্থায় দেখা যায়।

তাদের দাবি, সংবাদ সম্মেলন চলাকালীন সাজ্জাদের লোকজন অতর্কিত হামলা করে সিরিয়াল ঘর এলাকা দখলের পায়তারা করছিল। এসময় একজনকে সাজ্জাদের লোক দাবি করে তারা অতর্কিত হামলা করে এবং ছুরির আঘাত দেওয়ার চেষ্টাকালে পুলিশ এসে তাকে রক্ষা করে। এভাবেই বিভিন্ন সময়ে সংঘর্ষে হাসপাতালে ভর্তিও রয়েছে অনেকে।

যদিও এর আগে শ্রমিকের মজুরি, সমিতির নির্বাচন, লোড-আনলোডসহ বিভিন্ন দাবির আন্দোলনে সংঘর্ষ ও বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন, সরকার পক্ষ ও জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে সাময়িক বিশৃঙ্খলা রোধ হলেও আশানুরূপ কোনো সমাধান আজও হয়নি বলে দাবি করেন সাধারণ শ্রমিকেরা। শুধু তাই নয়, প্রথমের দিকে শ্রমিকের কোটি কোটি টাকা কৌশলে সর্দাররা হাতিয়ে নিয়েছে মর্মে অভিযোগ তুঙ্গে থাকলেও এবার সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলো সর্দার গ্রুপ থেকে।

এই ইস্যুতে বুড়িমারী লেবার ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক (সর্দার গ্রুপ) হামিদুল ইসলাম জানান, সাজ্জাদ স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা হয়ে শ্রমিক লীগ দাবি করে শ্রমিকের কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি তাদের ব্যবহার করছে। এছাড়াও সাজ্জাদ আলোচিত জুয়েল হত্যা মামলার আসামী হয়ে বুড়িমারী পোর্টকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে বলেও জানান এই সর্দার।

তিনি আরও জানান, ‘আমাদের বন্দরে লোড-আনলোডে কোনো সমস্যা নেই। শ্রমিকের আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। কিন্তু সাজ্জাদ গং সর্দার কর্তৃক আমাকে হত্যাচেষ্টা এবং আমাদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে যে গুজব ও শ্রমিকের মাঝে দাঙ্গা সৃষ্টির পায়তারার চেষ্টা করছে, মুলত সেগুলোর বিরুদ্ধে আমরা।’ এ সময় সুষ্ঠু সমাধানেরও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

এদিকে সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ‘পরিস্থিতি বাস্তবে এমন ছিলো না। খবর নিয়ে দেখেন যে, বহু বছর ধরে শ্রমিকেরা সর্দারদের কার্যক্রমে অতিষ্ঠ। আমি শ্রমিকদের ন্যায্যতা নিয়ে কথা বলায় সর্দারদের লোকজন ও মিঠু চেয়ারম্যানের লোকজন (বুড়িমারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান) জাহানুর, পরিমল, পলাশ, বাবু, আইয়ুব, মাইদুলসহ আরও অনেকে আমাকে হুমকির মধ্যে রেখেছে। আমি বাসা থেকে বের হতে পারছি না।’ যদিও ইউপি চেয়ারম্যান তাহাজুল ইসলাম মিঠু তার এসব অভিযোগকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে উল্টো শ্রমিকের টাকা আত্মসাৎ করায় শ্রমিকরাই তাকে খুুঁজে বেড়াচ্ছে বলে দাবি করেন।

সাজ্জাদ এসময় আরও জানান, ‘প্রকাশ্যে যারা অস্ত্র নিয়ে বেড়াচ্ছে তারা কারা? শ্রমিকের সংগঠন অরাজনৈতিক। তারা সেটাকে ভিন্নদিকে নেওয়ার চেষ্টা করছে। টাকার যে অভিযোগ তারা করছে তার কোনো প্রমাণ তারা দেখাতে পারবে না।’ এসময় তিনি নিরাপত্তাহীনতায় আছেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক জানান, আমরা যেদিকেই যাই সেদিকে বিপদে পড়ি। আমরা কাজ করে সংসার চালাই। এত ঝামেলায় যেতে চাইনা। কে কি করছে আমরা অন্তত সব বুঝি। কিন্তু এভাবে দ্বন্দ্ব আমাদের স্থলবন্দরের সুনাম নষ্ট করছে। সাথে যে কোনো সময় ‘জুয়েল হত্যাকান্ড’র মতো বড় ধরণের অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটতে পারে বলেও গভীর আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। এসময় তারাও কিছু ঘটার আগে দ্রুত বন্দরে স্থিতিশীল পরিবেশ ফেরানোর জন্য দায়িত্বশীলদের ভূমিকা দেখতে চাওয়ার প্রত্যাশা করেন।

এ বিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, ‘শ্রমিকদের স্বার্থের কথা ভেবে দুই পক্ষের সচেতন হওয়া জরুরি। এর বাইরে বন্দরের শৃঙ্খলা ফেরানোর ক্ষেত্রে আমরাও তৎপর রয়েছি।’

লালমনিরহাট পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কেউ যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করতে চায় তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here