নাসির নগরে শত বছরের মক্তব ও কবরস্থানের জায়গায় জলমহাল ( খাস জায়গায়) ইজারাদারের কবলে ! মক্তবের বেহাল দশা !!

0
428
এম এ কাদের, সরজমিন প্রতিবেদকঃ ব্রাহ্মণ্যবাড়ীয়া
 জেলার নাসির নগরে শত বছরের পুরনো কবরস্থান ও মক্তব জলমহাল (খাস জায়গায়) ইজারাদার ভোগদখলকারীর কবেল রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ব্রাহ্মণ্যবাড়ীয়া জেলার নাসির নগর উপজেলার শ্রীঘর গ্রামের ৪নং ওয়ার্ডের তালুকদার বাড়ীর শত বছরের মক্তব ও কবরস্থানে জায়গায় (খাস জমি) জলমহাল ইজারাদার মাছ চাষ করার কারনে পুকুরের চার পাড় ভেঙে ইতিমধ্যে বেহাত হয়ে গেছে। মক্তব ও কবরস্থানের জায়গায়সহ পাঁচটি পরিবারের বসত ভিটাও চলে যাচ্ছে ইজারাদারের কবলে।
২৩শে মে সোমবার সরজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, তালুকদার বাড়ীর মক্তবের করুন পরিনতি। মক্তবের ঘরটি বেঙে বেশ অর্ধাংশ চলে গেছে পুকুরে। প্রায় দুই শতকের মত জায়গায় এখন খাস জায়গার সাথে পুকুরে পরিনত হয়েছে। এ সাথে পুকুরের পূর্ব পাড়ে মক্তব সংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থানের জায়গায়ও সমপরিমাণে ভেঙে মিশেছে খাস জায়গার সাথে। এবং পশ্চিম পাড়ে রয়েছে এলাকার বিশাল কবরস্থান, সেই কবরস্থানের বেশ কিছু জায়গাও ভেঙে চলে গেছে পুকুরে।
তাছাড়া সবচেয়ে বড় অবাক দৃষ্টিতে নজর পড়ল মক্তবের ভিতরের দৃশ্যটি। মক্তবের ভেতরে বেশ কিছু কোরআন শরীফ পরিত্যক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে রয়েছে তাও অনুসন্ধানের নজরে আসে এবং মক্তবের বারান্দায় রয়েছে লাশ বহনের পালকিবাহক। তার সাথে ঘেঁষে বিস্তীর্ণ জায়গায় জুড়ে বরাট রয়েছে গরুর গৌবরের দ্বারা বানানো গই, গ্রাম্য ভাষায় যাকে বলে চটা। মক্তবের ঘরটি বেহাল দশায় রয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে স্হানীয়রা জানান, দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর যাবত এই মক্তবখানা বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকার কারনে আস্তে আস্তে সরকারি খাস খতিয়ান ( ৫৯৪৬ পুরাতন দাগ) ৫৯৩৫ (নতুন) দাগ নং এর জায়গায় মিশিয়ে রয়েছে। এছাড়া দুইটি কবরস্থানের জায়গাও একইভাবে ভেঙে চলে যাচ্ছে খাস খতিয়ানের জায়গার দখলে। আর এই সুবাদে ইজারাদারগন পুকুর লিজ নিয়ে খাস জায়গার সাথে কবরস্থান ও মক্তবের জায়গায়সহ পাঁচটি পরিবারের জায়গায় ভোগদখল করে সুবিদা নিয়ে পায়দা লুটছে।
উল্লেখিত দাগে খাস জায়গার পরিমান হল ১১৫ শতক কিন্তুক বর্তমানে পুকুরের চার পাড় ভেঙে পুকুরে পরিনত হয়েছে, মক্তব, কবরস্হান ও পাঁচ পরিবারের জায়গাসহ প্রায় ১২৫ শতকের মত।
এ ব্যাপারে মক্তবের সভাপতি মোঃ দেওয়ান আলীর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এই মক্তবের দায়িত্ব সভাপতি পদে আমাকে দিয়েছেন মৌখিক ভাবে বেশ কিছু দিন পূর্বে। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি মক্তবের ঘরটির পূর্নরায় মেরামত করার জন্য। কিন্তুক পুকুরের মাছ চাষ চলমান থাকায় গাইড ওয়াল স্হাপন না করা পর্যন্ত কাজ করে কোন লাভ হবে না। আর গাইড ওয়ালের বিষয় আমি উপজেলার চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করার পর মক্তবের গাইড ওয়াল স্হাপনের জন্য দেড় লক্ষ টাকাও বরাদ্দ দিয়েছেন কিন্তুক কাজটি এখনো শুরু হয়নি। তাছাড়া মক্তবের তহবিলে কত টাকা আছে তাও আমার জানা নেই। কারন পূর্বের দায়িত্ব পালনকারী ক্যাশিয়ার ( সেন্টু মিয়া) এখনও তহবিলের কি পরিমান অর্থ আছে তা সমজাইয়া দেইনি নতুন ক্যাশিয়ারের নিকট। আর মক্তবের নামে কিছু জমিও দান করেছেন, এলাকার কিছু ব্যক্তি তা আবার ওয়াকফ করে দেওয়া হয়নি।
এক পর্যায়ে মক্তবের ভেতরে কোরআন শরীফের বিষয়ে দায়িত্বশীলতার বিষয় প্রশ্ন করলে, জবাবে তিনি বলেন আমি বিষয়টি জানিনা কে বা কাহারা মক্তবের ভেতরে গরুর গই ( চটা) রেখেছে এবং কোরআন শরীফের পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে তাও আমার জানা নেই। বিষয়টি নিয়ে আমি অবিলম্বে ব্যবস্হা গ্রহণ করব।
আর এদিকে সাবেক ক্যাশিয়ার সেন্টু মিয়া সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, মক্তবের তহবিলে কোন টাকা নেই। এই মক্তবটি ভেঙে যাওয়া বর্তমানে মসজিদের মধ্যেই মক্তবের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে । আর হুজুরের বেতন আমরা নিজেরা ভরতুকি দিয়ে আসছি পূর্বে থেকে। মক্তবের তহবিলে কোন টাকা পয়সা নেই বললেই চলে।
ঐ মহল্লার মনির মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে, তিনিও মক্তবের করুন পরিনতির বিষয়টি স্বীকার করে এবং মক্তবের তহবিলের বিষয় অন্যরকম তথ্য প্রদান করেন।
মহল্লার তরুণ সমাজের হাবিব তালুকদার জানান, আমি বাড়ীতে বেশি সময় থাকি না। ব্যবসার দায়ে আমার অধিকাংশ সময়ই ঢাকায় থাকা পড়ে। তারপরও আমি অনেক চেষ্টা করেছি মক্তব্য ও কবরস্থানের জন্য। আমার দৃষ্টিতে সব চেয়ে বেশি কষ্টদায়ক হল, সরকারী খাস পুকুরকে কেন্দ্র করে যে অবস্থায় আছে কবরস্থান, যদি কোন মানুষ মারা যায়, মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করতে গেলে কবরস্থানে লাশ নিয়ে যেতে খুব কষ্ট হয়। পুকুরের মাছ চাষের কারনে কবরস্থানের রাস্তা বেঙে পুকুরে পরিনত হয়েছে। মক্তবের জায়গায় ভেঙে এখন মক্তবও বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কি বলব আর আমাদের সমাজের নেতা ও মুরুব্বিদের কথা। আমরা কিছু বলতে গেলেই, তারা বলে ডিজিটাল যুগের ডিজিটাল যুব সমাজ বেয়াদ। ময়-মরুব্বিদের উপরে দিয়ে নেতৃত্ব দিতে আসে তারা কেমন যুবক। আমি চাই অবিলম্বে যেন মক্তব ও কবরস্থানে জায়গায় খাস জায়গায় থেকে আলাদা করে আমাদের সমাজ কে, এই অভিশাপ থেকে মুক্ত করে সরকার ও প্রশাসন ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন কিছু ব্যক্তিরা জানান, মক্তবের জমিদাতা ছিলেন বান্টির মা নামে একজন মহিলা। উনি মক্তবের জন্য ১৫ শতক জায়গা দান করে যান। আবার কোন কোন ব্যক্তির কাছ থেকে জানা যায়, উক্ত জায়গায় ( মক্তব ) ঐতিহ্যবাহী খান্দুরা দরবার শরীফের ওলীয়ে কামেল সৈয়দ আক্তারুল হোসাইন (রঃ) নামে দান করে দেওয়ার পর, সৈয়দ আক্তারুল হোসাইন(রঃ) তিনি মক্তবের জন্য জায়গাটি ঘোষণা করে দেন। তার পর থেকে এই মক্তবটি দীর্ঘ বছর যাবত চলমান ছিল। কিন্তুক আজ প্রায় পাঁচ বছর যাবত মক্তবটি বন্ধ হয়ে তিলে তিলে বিলুপ্তের পথে বসছে, যা খুবই দুঃখ ও বেদনাদায়ক।
আর সভাপতির বক্তব্যে জানা যায়, মক্তব্যটি বন্ধ রয়েছে আনুমানিক ৬ থেক ৭ মাস যাবত এবং (সেন্টু মিয়া) সাবেক ক্যাশিযারের বক্তব্যে জানা যায়, মক্তবটি বন্ধ রয়েছে দেড় বছরের মত। আর স্হানীয় সচেতন মহলের নাগরিকদের কাছ থেকে জানা যায়, মক্তবটি বন্ধ রয়েছে প্রায় ৫ বছর যাবত।
পুকুর ঘেঁষে বসত ভিটা’র পরিবারের সদস্যরা জানান, পুকুরে পাড় মেরামত না করার কারনে যে কোন সময় আমাদের শিশু বাচ্চারাও পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে আশংকাজনক। তাছাড়া আমাদের বসত ভিটা দিন দিন পুকুরে পরিনত হয়ে যাচ্ছে। আমরা অসহায় গরিব দুঃখী মানুষের জন্য কারো সুদৃষ্টি হয় না। সরকার ও প্রশানের উর্ধতন কর্মকর্তাদের প্রতি আমাদের আকুল কাকুতি মিনতিতে রইল, আমাদের সন্তান ও জীবন রক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে অবিলম্বে যেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করেন। পাশাপাশি মক্তব ও কবরস্থানের বিষয়টিও যেন নজরে এনে এর সু-ব্যবস্হা করেন।
এই বিষয়ে ৪নং ওয়ার্ড সদস্য ( মেম্বার) মোঃ গোলাপ মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি সরজমিন প্রতিবেদক কে বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না এমনকি আমাকে কোন ব্যক্তি অবগতও করেনি। যেহেতু আমি এখন আপনার মাধ্যমে জানতে পেরেছি অবশ্যই আমি মক্তবের কমিটির লোকজনদের সাথে যোগাযোগ করে, আমার সাধ্যমত চেষ্টা করব যাতে করে মক্তবের ঘরটি মেরামত হয় এবং কবরস্থানের বিষয়টিও যেন নিরাপদ হয়। যাতে খাস জমির কবলে ( পুকুরে) না থাকে মক্তব, কবরস্থান ও সাধারণ জনতার জায়গা । প্রয়োজনে আমি আমাদের চেয়ারম্যানের সহযোগিতা নিয়ে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকট বিষয়টি তুলে ধরব। শুধু তাই নয় মক্তব ও কবরস্থানের জন্য আমার ব্যক্তিগত জীবনের সর্বচ্চ সহযোগিতার নজর থাকবে। কারন হল মুসলমানদের জন্ম’র পর ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রথম স্থান হল মক্তব্য আর মুসলমানদের জীবনের শেষ ঠিকানা হল কবরস্থান। শুরু এবং শেষ এর সাথে আমি আছি ও থাকব। পাশাপাশি পুকুরের পাশে পাঁচটি পরিবারের বসত ভিটাও রয়েছে তাদের নিরাপদ আশ্রয় বাস্তবায়নেও আমার সর্বচ্চ নজর থাকবে।
এই বিষয় নাসির নগর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত  নির্বাহী কর্মকর্তার মোঃ মেহেদী হাসান খাঁন শাওন এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি জানি না কিন্তুক এই বিষয়ে আমি খুজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করব। অথবা আমার নিকট যদি ঐ এলাকার কোন ব্যক্তি লিখিত আকারে বিষয়টি উল্লেখ করে তাহলেও বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা গ্রহন করব ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here