সোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা ( ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃনেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ কোয়াটারে (সরকারী আবাসিক ভবনে) বিনা ভাড়ায় বসবাস করার অভিযোগ উঠেছে ইউএনওসহ ৩৫ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে।
উপজেলা পরিষদ ও অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীগণ সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে বিনা ভাড়ায় বসবাস করছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী,ব্যাংকার ও বে-সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও। ২০২১ সালে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। সেই ভবনটিকে ২ লাখ ৩৭ হাজার টাকার মধ্যে নিলাম ঘোষণা করার নির্দেশে উপসচিবের সাক্ষরিত পরিপত্র জারি করেছিল সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাঁর কোনটিরই পাত্তা দেননি ইউএনও মোহাম্মদ রাজীব উল আহসান। তবে ঝুঁকি নিয়েই পরিত্যক্ত ভবনে ভাড়া ছাড়াই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন তিনি।
সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিন ঘুরে এইসব অনিয়মের চিত্রই দেখা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নির্ধারিত ভবনে মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আরিফুল ইসলাম, উপজেলা কৃষি অফিসার মাহবুবুর রহমান, উপজেলা মৎস্য অফিসার গোলাম মোস্তফা, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মেহের উল্লাহ, কম্পিউটার অপারেটর ভূমি অফিস মো. শাহিন মিয়া, ভূমি অফিসের চালক সাকিব মিয়া, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহায়ক জাকির মিয়া, একাডেমিক সুপারভাইজার মো. নাসির উদ্দিন, কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা আ. সালাম ব্যাংকার ও কাকৈরগড়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পাভীন আক্তার, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হামিদা সুলতানা, মাঠ সহকারী (এলজিইডি) মোমেন মিয়া, অফিস সহকারী ভূমি অফিসের আঃ মোতালিব শামীম নামীয় ব্যক্তিরা যোগদানের পর থেকেই উপজেলা পরিষদ কোয়াটারে বিভিন্ন ভবনে বসবাস করছেন।
অপরদিকে সরকারী কর্মচারীগণের জন্য নির্মিত ডরমিটরীতে যারা বসবাস করছেন ইউএনও অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সুবল রঞ্জন কর (বর্তমানে এলপিআর), এলজিইডি অফিসের সহকারী হিসারক্ষক মো. আশিক ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী শহীদ মিয়া, ডায়নিং রুমটি আবাস্থল বানিয়ে বসবাস করছেন এলজিইডি অফিসের ইলেট্রশিয়ান শাহীনুর আলম ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের অফিস সহকারী আতিকুর রহমান। উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তা নিয়াজুল, মোকলেছ উদ্দিন, মোতাহার হোসেন ও সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার স্বপন কুমার,ইউএনও অফিসের পিয়ন হাবীব, এলজিইডি অফিসের সুজন,প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের ফাহিম, নির্বাচন কমিশন অফিসের কম্পিউটার অপারেটর আজহার মিয়া, দুর্গাপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাজেদুর রহমান ১১ মাস এবং এ ইউ আলিম মাদ্রাসার প্রভাষক আশরাফুল ইসলাম ২ বছর ধরে বসবাস করছেন।
উপজেলা পরিষদ কোয়াটারে (সরকারী আবাসিক ভবনে) বসবাসকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, একটি প্রমোট ভবনের দুটি রুমে দুজন কর্মকর্তা প্রতি মাসে ৫শ টাকা জমা দিয়ে থাকেন। এমন জমা রশীদ দেখান দায়িত্বে থাকা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মেহেরুল্লাহ। বাকী সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যক্তিরা ভাড়া কর্তনের বিষয়ে উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেণ। ডরমিটরীতে যারা বসবাস করছে তাঁদের সাথে ভাড়া কর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে অনেকেই এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজী হননি। কেউ কেউ বলেন ভাড়া দেইনি, কিন্তু বিদ্যুৎ বিল আর সংস্কার কাজে মাঝে মধ্যে সহায়তা করি। উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ কোয়াটারে (সরকারী আবাসিক ভবনে) বসবাসকারী ওই সকল ব্যক্তিদের বেতন-ভাতা থেকে কোন প্রকার বাড়িভাড়া কর্তন করা হচ্ছেনা বা কোন প্রকার বরাদ্ধও নেননি বসবাসকারী ব্যক্তিরা। অথচ তারা নির্বিঘ্নে বিনা ভাড়ায় বসবাস করছেন ঐ সকল সরকারি ভবনগুলিতে।
উপজেলা সরকারি বাসা বরাদ্ধ ও সংস্কার কমিটির সাধারণ সম্পাদক (উপজেলা প্রকৌশলী) মো. খোয়াজুর রহমান বলেন, যাদের বাসাভাড়া বকেয়া আছে সেটি বিধি মোতাবেক পাওনা আদায় করা হবে। অন্যথায় সরকারী বিধি মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে বাসা খালি করার জন্য অতিসত্বর উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মাসুম খাঁন জানান, খামার ব্যবস্থাপক ছাড়া অন্য কারো বেতন-ভাতা থেকে বাড়িভাড়া কর্তন করা হয় না বা কেউ বাসা বরাদ্দও নেয়নি। যদি কেউ বরাদ্দ নিয়ে থাকতো, তাহলে বাড়ি ভাড়া কর্তন হতো অটোমেটিক। তারা কিভাবে উপজেলা পরিষদ কোয়াটারে(সরকারী আবাসিক ভবনে) থাকছেন সেটি আমার জানা নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান এক প্রশ্নের জবাবে জানান, উপজেলা বাড়িভাড়া বরাদ্দ ও সংস্কার কমিটি এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে। আমি যদিও ওই কমিটির সদস্য। তবে উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে কথা বলে এ বিষয়ে একটি দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, বিষয়টি আমার অজানা,এ বিষয়ে ইউএনও দুর্গাপুর এর সাথে কথা বলে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যারা সরকারকে ভাড়া দিচ্ছে না এবং ভাড়া বিহীন যারা এসব কোয়ার্টারে থাকছেন জরুরি ভিত্তিতে খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।