এফআইআর টিভি অনলাইন ডেস্কঃ সোসাল মিডিয়ার ফেইসবুক পেইজ amarsylhet24.com সম্পাদক সাংবাদিক আনিসুল ইসলাম আশরাফি এই বিষয়টি তুলে ধরেছেন। যা হুবহু নিম্নে দেওয়া হল।
“পানির মাছের জন্য শুকনার কুটুম হারাতে নেই”
বিভিন্ন সময়ে দাওয়াত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনদের বিভিন্ন ধরনের স্ট্যাটাসের উল্লাস-ইঙ্গিত ও অগণিত মানুষের মন্তব্য থেকে আমার এই লেখার প্রারম্ভিকা-
আমরা যারা দাওয়াত না পেলে ভিতরে ভিতরে কষ্ট অনুভব করি বা মনে করি আমিতো অমুকের দাওয়াত পেলাম না,আপন ছিলাম। সে তো আমাকে বলেনি।
না ভাই, না বলার মধ্যে অনেকগুলো কারণ থাকে এর মধ্যে প্রধান কারণ হচ্ছে সংগতি। দাওয়াত, আমন্ত্রণ ও নিমন্ত্রণ এর প্রধান শর্ত হচ্ছে এটিকে সামাল দেওয়ার সংগতি, যা একটি দাওয়াতের মূল সাবজেক্ট বা বিষয়।
এছাড়া যে বিষয়গুলো থাকে যার ফলশ্রুতিতে আপনার কাঙ্খিত বিষয়ে দাওয়াত না পেয়ে দুঃখিত বা মর্মাহত হন তাহলে আপনাকে কিছু বিষয় হৃদয়ঙ্গম করতে হবে- আপনি কাউকে আপন ভাবলেও সে আপনাকে তা ভাবেনা এমনকি সে আপনাকে জানেও না, কারন তার সাথে আপনার সেই প্রকারের লেনদেন নেই,আবার কখনও কখনও অতি আপনজনেরাও দাওয়াত থেকে বঞ্চিত হয়, হয়তো ভুলে না হয় অবহেলা অথবা ঝগড়া বিবাদ মতপার্থক্যের ফলে।
মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে আমরা দাওয়াতের একটু ব্যাখ্যা করি।দাওয়াত মূলত আরবি শব্দ আমাদের সমাজে দাওয়াত আমন্ত্রণ ও নিমন্ত্রণ এর কাজেই অধিক ব্যবহৃত হয়।আমন্ত্রণ-নিমন্ত্রণ এর ভিন্ন ভিন্ন অর্থ-ব্যাখ্যা ব্যবহার থাকলেও আজ মুলত নিমন্ত্রণ নিয়েই কথা বলছি যা বিয়ে সাদী ও সামাজিক অনুষ্টানে ব্যবহৃত হয়।
এখন আসি নিমন্ত্রণ অর্থাৎ দাওয়াত নিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা মন্তব্যের গন্তব্য নিয়ে কিছু কথা।আমন্ত্রণের জন্য যেমন যোগ্যতা প্রয়োজন তেমনি দাওয়াত নিমন্ত্রণের যোগ্যতা ও শর্ত প্রযোজ্য।
যে লেনদেন যোগ্যতা ও সম্পর্কের শর্ত পূরণের কারণে আপনি একজনের দাওয়াতের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন। সে যোগ্যতা কি এবং এর কারণ টা কি তা জানতে হলে আমার এই লেখা থেকে কিছুটা হলেও ক্লিয়ার হবেন আশা করি। অর্থাৎ আপনাকে জানতে হবে যে কারো দাওয়াত পেতে হলে যে যোগ্যতার প্রয়োজন তা আপনার মধ্যে কতটুকু বিদ্যমান? যদি দাওয়াতকারী নিজে দাওয়াত দিয়ে থাকেন তাহলে এক কথা, আর যদি দাওয়াত কারীর পক্ষে কেহ দাওয়াত দিয়ে থাকেন তাহলে ভিন্ন কথা। যদি দাওয়াত কারী নিজে হন তাহলে তিনি যাদেরকে দাওয়াত দিবেন তাদের ব্যাপারে বলছি -আমরা সাধারণত জানি দাওয়াত দিতে হলে নিম্নলিখিত সম্পর্কের প্রয়োজন হয়।
যথা- ১, রক্ত বা বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয়,২,দলীয় বা ধর্মীয় সাপোর্টার, ৩, বিত্তশালী, ৪, শক্তিশালী, ৫, প্রতিবেশী ৬,ব্যবসায়ীক বা সিন্ডিকেট সদস্য।
যখন কোন প্রকার দাওয়াত থেকে বঞ্চিত হলেন তখন আপনাকে ভেবে নিতে হবে যে দাওয়াত কারীর সাথে আপনার উপরোক্ত ছয়টি সম্পর্কের কোনোটিই নেই। তাহলে কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই।
হ্যা, আপনি ভাবছেন হয়তো এইগুলোর অনেক শর্ত আপনার তার সাথে মিলে যায় কিন্তু সেটি আপনার ধারনা, দাওয়াত কারীর ধারণা এমনটি নয় তিনি এ ব্যাপারে অজ্ঞ ।এখন হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন অনেক দাওয়াতি দেখা যায় যে ছয়টি সম্পর্ক ছাড়াও ব্যতিক্রম সম্পর্কের লোক দাওয়াত পেয়েছে! তাহলে আপনাকে ভাবতে হবে ওই লোকটি চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য স্বেচ্ছায় দাওয়াতের ভান করে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে অথবা দাওয়াত কারীর পক্ষে কোন লোক কেবলমাত্র তার সিন্ডিকেটের লোককে দাওয়াত দিতে গিয়ে তিনিও দাওয়াত পেয়ে গেলেন আর এই সুযোগে তিনি সেখান থেকে তিনটি ফায়দা হাসিল করার সুযোগ নিয়েছেন যেমন- এক) দাওয়াত কারীর শুভাকাঙ্ক্ষীদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে যে, তোমরা কেমন শুভাকাঙ্ক্ষী দাওয়াত তো আমি পেয়ে গেলাম তোমরা তো পেলে না, দুই) তার বলয়ের লোকদের বুঝাবে যে, আমি বেশ মূল্যবান সেজন্য অমুক আমাকে দাওয়াত দিয়েছে অর্থাৎ আমি তোমাদের ছাড়াও অন্যদের থেকে বেশ গুরুত্ব পেয়ে থাকি, তিন) এই সুযোগে অনুষ্ঠান ও দাওয়াত কারীর দুর্বলতা সংগ্রহ করে যথোপযুক্ত সময়ে কাজে লাগানোর চেষ্টার অন্বেষণ।
সত্যি যদি সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে কোন অনুষ্ঠানে কেহ দাওয়াত পেয়ে থাকেন, তাহলে একটি বাস্তব ঘটনা দিয়ে শেষ করছি,জেলা সদরে একটি বিয়ের দাওয়াতে গিয়ে একটি ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হলাম।
ঘটনাটি হল, এক হাজী সাহেবের ছেলে প্রবাসীর বিয়ের দাওয়াত দেওয়ার জন্য ছোট ছেলেকে দায়িত্ব দিয়েছে। ছোট ছেলে আত্মীয়-স্বজন সবাইকে দাওয়াত দিয়েছে। এর মধ্যে একই জেলার একটি রেলওয়ে স্টেশনের পাশে বসবাসকারী এক সুন্দরী নারীকে দাওয়াত দিয়ে পার্লার থেকে সাজিয়ে বরযাত্রীদের সাথে নিয়ে গেছে নিজ গাড়িতে করে। বাড়ির লোকদের কাছে পরিচয় দিয়েছে সে আমার বান্ধবী আর পরিচিত আত্মীয়স্বজনের কাছে পরিচয় দিচ্ছে আমার খালাতো বোন।মেয়েটিকে দেখতে অন্যান্য মেয়ের চেয়ে বেশি সুঠামদেহী ও সুন্দরী স্মার্ট। বিয়ের অনুষ্ঠানে মেয়ের বাড়িতে পৌঁছার পর সমবয়সী ওই এলাকার কয়েকজন এই মেয়েটিকে চিনে ফেলে! বরের আত্মীয়-স্বজনকে ওরা জিজ্ঞাসা করে এই মেয়েটি কে? একেক জন একেক উত্তর দেওয়ার পর বরের ছোটভাই পর্যন্ত প্রশ্নটি এসে পৌঁছে। বরের ছোট ভাই উত্তর দেয় ও আমার বান্ধবী প্রবাসী সিটিজেন্স। বাড়িতে আসছে বাংলাদেশের বিয়ে দেখতে এসেছে। সাথে সাথে এক ছেলে বলে উঠলো গলাবাজি করার আর জায়গা পান না? ওই মেয়েটি তো অমুক স্টেশনে থাকে সে তো হিজড়া!এই যদি আপনাদের চরিত্র হয় তাহলে আপনার ভাইয়ের চরিত্র কেমন?
বিশাল ঝামেলা, অনেক কথা, তর্ক বিতর্ক বিয়ে ভাঙ্গার উপক্রম। একসময় ছেলের বাবা এসে বলল বাবারা আমাকে ক্ষমা করো এই ছেলেটি তিন দিন ধরে মেয়েটিকে আমার বাড়িতে রেখেছে আমাকে বলেছে যে তার বান্ধবী। আমি তাকে প্রশ্ন করেছি মেয়েটিকে তার মা বাবা একা তোমার সাথে বেড়াতে ছেড়ে দিয়েছে এটা কেমন পরিবারের মেয়ে ? শুধুমাত্র বিয়ের অনুষ্ঠানে সমস্যা হবে বলে আমি তাকে কিছু বলিনি তোমরা আমার ছেলের সমান। আমার ছেলে আমার ইজ্জতের কথা না বুঝলেও আমার বিশ্বাস তোমরা তা বুঝবে।মুরুব্বির কথায় বিয়ে বাড়ি শান্ত হলেও নিজেদের মধ্যে কানাকানি, রাগারাগি এমনকি অনেকে না খেয়ে ফিরে এসেছে। তাই গ্রামের একটি প্রবাদ বলতে হয় “কখনো কখনো “খবরার গুনে বার্তা নষ্ট হয়।” এই “খবরার” কারনে ভুল বোঝাবুঝি করে আপনার আত্মীয়তা-সম্পর্ক,দলীয় সম্পর্ক অথবা ধর্মীয় সম্পর্ককে হিংসাত্মক ভাবে ছোট করে দেখবেন না বরং স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিবেন কখনো “পানির মাছের জন্য শুকনার কুটুম হারাবেন না।” সংশোধনযোগ্য
নোটঃ লেখাটি কাউকে ছোট বা বড় অথবা হেনস্তার উদ্দেশ্যে নয় একটি সামাজিক সম্বাব্য চিত্র মাত্র।কেহ কষ্ট পেলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।