এম এ কাদেরঃ মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আজ বয়স ৫২ বছর। এই সময়েও ৫৫ বছর বয়েসী ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ পরিচয়ে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও নির্বচনী ফায়দা হাসিল করছেন এক প্রবাসী। মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার থেকে সুযোগ সুবিধে আদায়ের চেষ্ঠা এবং নির্বচনী বৈতরণী পার হতে চাচ্ছেন। তিনি হচ্ছেন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ৭নং দেওকলস ইউনিয়নের দেওকলস গ্রামের মৃত আঞ্জব আলীর পুত্র যুক্তরাষ্ট্র (আমেরিকা) প্রবাসী মোহাম্মদ আলী ওরফে এনাম। আসন্ন দেওকলস ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে সম্ভাব্য প্রার্থী তিনি। এই পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য তিনি তার লোকজন দিয়ে এলাকায় বিভিন্নভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ও হাসিনা পুত্র জয়-এর জয়েন্ট ছবির সাথে নিজের ছবি ব্যবহার করে এলাকায় বৃহদাকারের পোস্টার সাঁটিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। পোস্টারে তিনি নিজেকে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ লিখে এলাকাবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন।
বিশ্বনাথ উপজেলার দেওকলস ইউনিয়নের হাটবাজার ও স্কুল কলেজ-মাদ্রাসার প্রতিটি দেওয়ালে শোভা পাচ্ছে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ মোহাম্মদ আলী নামে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর জমকালো পোস্টার। আর এ নিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ সচেতন মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তোলপাড় শুরু হয়েছে তার ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ দাবি নিয়ে।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকার সাধারণ মানুষ বলছেন- মোহাম্মদ আলী এনাম আমেরিকা প্রবাসী হলেও তিনি আদৌ কোনো মুক্তিযোদ্ধা নন। বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে তিনি সরকার ও সরকার দলসহ জনগনের সাথে প্রতারণা করছেন।
মোহাম্মদ আলী ওরফে এনাম “বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ আলী” নামীয় তার ফেইসবুক আইডি-তে নিজের জন্মসন লিখেছেন ১৯৬৬ সাল। সেই হিসেবে তার জন্ম মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪ বছর আগে। এছাড়াও তার বর্তমান বয়স ৫৫/৫৬ বছর হতে পারে বলে এলাকার অনেকে মন্তব্য করছেন। সেই হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ৪থেকে ৫ বছর। এতো অল্প বয়সে তিনি কিভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে “বীর মুক্তিযোদ্ধা” খেতাবধারী হতে পারেন এটাই সচেতন মহলের প্রশ্ন।
অন্যদিকে বিশ্বনাথ উপজেলার ১০৯ জন মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায়ও মোহাম্মদ আলী এনাম নামে কোনো মুক্তিযোদ্ধা নেই। বিশ্বনাথ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের যে তালিকা রয়েছে সেটিতে উপজেলার ৭নং দেওকলস ইউনিয়নে মাত্র ৪ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম আছে । আর তারা হলেন- দেওকলস আগ্নেপাড়ার মৃত হাজী আলফু মিয়ার পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সিরাজুল ইসলাম, যার ক্রমিক নং-৪৫, গেজেট নং-১৮২৩ এবং জাতীয় তালিকা নং-৪৬। অপরজন হচ্ছেন-ইউনিয়নের কোনারাই গ্রামের মৃত ইউনুছ হাওলাধারের পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নূরুল ইসলাম, যার ক্রমিক নং-৫৯, গেজেট নং-১৪৪৩। তৃতীয় জন হচ্ছেন- একই কোনারাই গ্রামের হাজী আছদ্দর আলীর পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মুমিন আলী, যার ক্রমিক নং-৬০,গেজেট নং-১৪৪৬ এবং জাতীয় তালিকা নং-৭৮, এবং ৪র্থ জন হচ্ছেন- ইউনিয়নের আলা পুর গ্রামের মৃত আহম্মদ আলীর স্ত্রী ছালেহা বেগম, যার ক্রমিক নং-১০৭।
উল্লেখিত ৪ জন ব্যতিত বিশ্বনাথের ৭ নং দেওকলস ইউনিয়নে তালিকাভুক্ত অন্য কোনো মুক্তিযোদ্ধা নেই। মুক্তিযোদ্ধার বয়স নেই এবং রাষ্ট্রের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা বলে নামও নেই। তদুপরি আমেরিকা প্রবাসী মোহাম্মদ আলী (এনাম) নিজেকে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ৎ বলে ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার ছাপিয়ে আগাম নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এতে করে প্রবাসী মোহাম্মদ আলী এনাম মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সুনাম এবং মুক্তিযুদ্ধের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন বলে অভিযোগে প্রকাশ।
ইউনিয়নের দেওকলস গ্রামের ৮০ বছর বয়েসী সুন্দর আলী জানান, আমার প্রতিবেশী প্রবাসী মোহাম্মদ আলী এনাম ছোটকাল ধরে আমেরিকায় থাকেন। তবে তিনি আদৌ মুক্তিযোদ্ধা নন। মুক্তিযুদ্ধের সময় এরাকার কারা মুক্তিযিুদ্ধে গিয়েছিলেন তাদের সকলকে আমি চিনি ও জানি। তাকে বীর মুক্তিযোদ্ধা বলে আগাম নির্বাচনী প্রচার চালানোতে আমরা বিব্রতবোধ করছি। এহেন প্রচার সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে জানান তিনি।
দেওকলস ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খায়রুল আমিন আজাদ বলেন মোহাম্মদ আলী এনাম যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সত্য । দেশে আসলে গ্রামবাসী তাকে সংবর্ধনা দিয়েছেন এবং আমিও এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যাই। তবে তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা বলে আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে প্রবাসী মোহাম্মদ আলী এনামের ভাতিজা সোহেল আহমদের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন- আমার চাচা মোহাম্মদ আলী মুক্তিযোদ্ধা বলে আমাদের বলেছেন এবং তার নামে মুক্তিযোদ্ধা সনদ রয়েছে বলে আমাদেরকে জানিয়েছেন তবে আমরা দেখিনি। তিনি নিজেই তার সমর্থকদের দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা খেতাবে পোস্টাািরং করিয়েছেন।
এ বিষয়ে বিশ্বনাথ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ডার ওয়াহিদ আলী বলেন- দেওকলস ইউনিয়নের মোহাম্মদ আলী এনাম নামে কোনো মুক্তিযোদ্ধা নেই। তিনি মুক্তিযোদ্ধা হলে এবং মুক্তযোদ্ধা হয়ে নির্বাচনে দাঁড়াতে হলে অবশ্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করতেন। আমার জানামতে দেওকলস ইউনিয়রেন ৪ জনের বেশি আর কোন মুক্তিযোদ্ধা নেই।
এ ব্যাপারে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী যুক্তকরাষ্ট্র প্রবাসী মোহাম্মদ আলী এনামের সাথে যোগাযোগের চেষ্ট করে তিনি প্রবাসে থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এনামের ভাতিজা মোঃ সুহেল আহমদের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তার চাচা’র যোগাযোগ নাম্বার চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে ওনার মোবাইল নাম্বার নেই।