নিজস্ব প্রতিবেদক: মুঠোফোনে আর্থিক সেবা (এমএফএস) হাজার টাকায় ২০ টাকা চার্জ বা মাশুল নেওয়ার মাধ্যমে দেড় টাকা করে বাড়তি নেওয়া হচ্ছে। নির্ধারিত মাশুল ১৮ টাকা ৫০ পয়সা। বাড়তি নেওয়া চুরি বা প্রতারণার শামিল।
টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) এ সভার আয়োজন করে। এতে বক্তারা মুঠোফোনে আর্থিক সেবা, এর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, প্রতিযোগিতা, সেবাগ্রহীতার ব্যয় ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁরা এমএফএস সেবায় গ্রাহকের চার্জ কমানোর উদ্যোগ নেওয়ার সময় এসেছে বলেও উল্লেখ করেন।
দেড় টাকা করে বাড়তি নেওয়াকে চুরি ও প্রতারণা হিসেবে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম। শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, দেড় টাকাকে বছরের মোট লেনদেন নিয়ে গুণ করে দেখুন, কত টাকা বাড়তি নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এমএফএস খাতে একচেটিয়া ব্যবসা রয়েছে।
এটা ঠেকাতে তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতাধারীর ওপর বিধিনিষেধ জারি করা প্রয়োজন। আবুল কাশেম বলেন, প্রত্যেক এজেন্টের দোকানের সামনে সর্বোচ্চ চার্জ সাড়ে ১৮ টাকা, সেটি লিখে দেওয়া অসম্ভব কোনো বিষয় নয়। প্রতিষ্ঠানগুলো লাইসেন্সধারী। তাদের সেবায় দেড় টাকা করে কীভাবে বেশি নেওয়া হচ্ছে, তা দেখা দরকার। তিনি বলেন, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের জন্য ৯ টাকা ৯৯ পয়সা চার্জ আরোপ করছে।
এটাও একধরনের চালাকি। দেশে এক পয়সার ব্যবহার কি আছে? আবুল কাশেম আরও বলেন, মুঠোফোনে টাকা পাঠাতে কোনো চার্জ নেওয়া যাবে না। এটা কেউ মানছে, কেউ মানছে না। এটার বিচার কে করবে, বাংলাদেশ ব্যাংক না বিটিআরসি—বিচারটা হওয়া দরকার। অনুষ্ঠানে আলোচনার একটি বড় অংশ ছিল প্রতি হাজার টাকা পাঠাতে ২০ টাকা মাশুল আদায় নিয়ে।
এমএফএস প্রতিষ্ঠান রকেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ব্যাংকগুলো প্রতি হাজারে দুই থেকে তিন টাকা মাশুল নেওয়া হয়। এর বিপরীতে মুঠোফোনে আর্থিক সেবায় মাশুল অনেক বেশি।
অবশ্য বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান আলম বলেন, সাত হাজারের মতো ব্যবহারকারীর ওপর জরিপ করে তাঁরা দেখেছেন, মানুষ ২০ টাকা চার্জ নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়। তবে দেড় টাকা বেশি নেওয়ায় তারা বিরক্ত। তিনি বলেন, দেড় টাকা করে বেশি নিয়ে অন্যায় করা হচ্ছে। মাহবুবুর রহমানের বক্তব্যের সূত্র ধরে মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা বিকাশের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মিজানুর রশিদ বলেন, মাশুল কমাতে গিয়ে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত যাতে না হয়।
অপারেটর ও গ্রাহকের জন্য ভালো হবে, এমন কোনো উদ্যোগে বিকাশের সহযোগিতা থাকবে। মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাব উদ্দিন আহমেদ উল্লেখ করেন, সেবার মূল্য যত কমবে, তত ব্যবহার বাড়বে। তিনি বলেন, মুঠোফোনে আর্থিক সেবায় ভবিষ্যতে বড় রূপান্তর ঘটবে। তখন ডিজিটাল মুদ্রা আসবে। এজেন্ট ব্যবস্থাও থাকবে না।
মুঠোফোনে আর্থিক সেবার বাজারে আপাতদৃষ্টে একচেটিয়া ব্যবসা হচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মফিজুল হক বলেন, ‘কেউ বাজার ক্ষমতার অপব্যবহার করছে, আমরা এমন কোনো অভিযোগ পাইনি। কমিশনের স্বপ্রণোদিত ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। আমরা দেখব।’ ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার একচেটিয়া ব্যবসা ঠেকানোর ওপর জোর দিয়ে বলেন, এটা মুক্তবাজার অর্থনীতির অন্যতম শর্ত। বাজারে প্রতিযোগিতা না থাকলে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তিনি বলেন, ‘একসময় বাবা টাকা পাঠাতে ১৬ কিলোমিটার হেঁটে ডাকঘরে যেতেন। এখন হাওরে জেলেরা নৌকায় বসেই লেনদেন করেন।’ নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ বলেন, মুঠোফোনে লেনদেনে প্রতি হাজার টাকায় ২০ টাকা চার্জ কোথাও নেই। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন টিআরএনবির সভাপতি রাশেদ মেহেদী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার দে।
এতে আইনজীবী ইফতেখার জোনায়েদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক বদিউজ্জামান দিদার প্রমুখ বক্তব্য দেন। সমীর কুমার দে বলেন, টেলিযোগাযোগ খাতে একটি মোবাইল অপারেটর ৪০ শতাংশের বেশি বাজার হিস্যাধারী হওয়ায় প্রতিযোগিতার স্বার্থে তার ওপর কয়েকটি বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বিটিআরসি।
মুঠোফোনে আর্থিক সেবায় একটি প্রতিষ্ঠান ৭০ শতাংশের মতো বাজার হিস্যাধারী। প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে এ খাতেও উদ্যোগ নেওয়া দরকার।