মোঃ মোরসালিন আহমেদ (মুসা), ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ হযরত শাহজালাল (রহমতুল্লাহি আলাইহি)-এর আগমনের ২৫০ বছর আগে ৪৪৫ হিজরি মোতাবেক ১০৫৩ খ্রিস্টাব্দে হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি বৃহত্তর ময়মনসিংহে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। ইমান- ইবাদতের চেতনায় উজ্জীবিত শ্যামগঞ্জের মিনারে মিনারে ধ্বনিত হয় তাওহীদ, রিসালাতের অমিয় বাণী। ঈদ, জুমার দিন হাজার হাজার মানুষ পায়ে হেটে বহুদূর পথ পাড়ি দিয়ে শ্যামগঞ্জ বড় মসজিদে এসে কোরআনের তাফসির এবং নামাজ আদায় করতে , মসজিদ তথা পূর্ণাঙ্গ দ্বীনি প্রতিষ্ঠান বড় মসজিদের ফজিলত নেওয়ার জন্য ।
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শ্যামগঞ্জ বাজারে বর্তমান চাল মোহল সংলগ্ন প্রায় দেড়শত বছর আগে (বাংলা১২৮০/ইংরেজি১৮৭৩খ্রিস্টাব্দে) তৎকালীন গণ্যমান্য মুসলমানগন নামাজ আদায়ের জন্য টিনের ছাপড়া দিয়ে মসজিদটি তৈরি করেন। পরবর্তীতে সেটি ছোট আকারে তিন গম্বুজ ওয়ালা ছোট একটি মসজিদে রূপান্তরিত হয়,কালের স্রোতধারায় মসজিদটি শ্যামগঞ্জের গর্ব ও ঐতিহ্যের স্মারক ”বড় মসজিদ”নামে পরিচিতি পায় । ইতিহাস এবং প্রবীণ মুসল্লিদের কাছ থেকে জানা যায় তৃতীয়বারের মতো যখন মসজিদটি পূর্ণ নির্মাণ হয় তখন মসজিদের মুসল্লী এবং এলাকাবাসী নিজেরাই কাদামাটি আগুন পুড়িয়ে মসজিদের জন্য ইট তৈরি করেন ।১৯৩৫ সালে বেঙ্গল ওয়াক্ফ এক্ট্যার অধীনে মসজিদটি পাবলিক ট্রাস্টে পরিণত হয়।
প্রায় ৩৮ শতাংশের জমির উপর নির্মিত এই ‘বড় মসজিদ’ তিনতলা সুরম্য স্থাপত্য নিদর্শন দারা বেষ্টিত। বর্তমানে মসজিদের দৈর্ঘ্য ৯০ফুট ও প্রস্থ ৭০ ফুট। ১৬৬২৮ ইঞ্চি স্কয়ার ফিটের মসজিদটিতে প্রতি তালায় নামাজের কাতার ২০টি। অন্তত চার হাজার মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন।
অপূর্ব অলঙ্করণে সুশোভিত মসজিদের 70 ফুট উঁচু মিনারটি নান্দনিক সৌন্দর্যের নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মসজিদের তিনটি প্রবেশ-মুখে আছে পবিত্র কোরআনের রেহাল এবং নান্দনিক কালো টাইলসের উপর আল্লাহু আকবার লেখা শোভিত ফটক। মসজিদের প্রবেশ মুখে রয়েছে রং-বেরঙের মাছের জলকেলি যা শোভামণ্ডিত করছে স্বচ্ছ-পবিত্র পানির একটি হাউজ ও আলাদা অজুখানা।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় মসজিদের অভ্যন্তরে রয়েছে নান্দনিক কার্পেট, দেয়ালজুড়ে রয়েছে সাদা রঙ্গের আস্তর ও মনোরম টাইলস, সুদৃশ্য ঝাড়বাতি, অত্যাধুনিক শব্দ নিয়ন্ত্রণ ও শীতাতপ ব্যবস্থা । মুসল্লিগণ মননে জান্নাতি আবহ ও ইবাদতে একাগ্রতা নিয়ে নামাজ আদায় করে থাকেন। পবিত্র রমজান মাসে অসংখ্য মুসল্লী বড় মসজিদে ইতিকাফ করেন। মসজিদ সংলগ্ন একটি বহুতল ভবনে রয়েছে সুবিশাল এক মাদ্রাসা, যার রয়েছে বর্ণিল ইতিহাস ও ঐতিহ্য। যার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হাফেজ মোঃ আবুল কাশেম। বাংলা ১৩৬০ বঙ্গাব্দে উনার নিজ উদ্যোগে মাদ্রাসার কাজ শুরু হয়েছিল। বিজ্ঞ এবং আধুনিক ট্রেনিং প্রাপ্ত আলেমগন এবং হাফেজদের তত্ত্বাবধায়নে ‘নূরানী থেকে হেফজ খানা’ হাদিস’ পর্যন্ত পাঠদান করা হয়।
মসজিদ মার্কেটে রয়েছে কুরআন-কিতাব, টুপি, জায়নামাজ, তাসবিহ সহ বিশাল সমারোহ।
প্রায় প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই এই মসজিদে অসংখ্য ইমাম, খতিব, ও মুয়াজ্জিনগন মসজিদের দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। তাদের মধ্যে আছেন মুন্সি মানিক, হাফেজ মোঃ আব্দুল খালেক, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মাওলানা আব্দুর রউফ , হাফেজ নাসির উদ্দিন , মাওলানা আব্দুল খালেক, মাওলানা আমজাদ হোসেন, মাওলানা আব্দুল শুকুর, এবং মাওলানা মাহবুবুর রহমান, খতিবের তালিকায় রয়েছেন মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মাওলানা এ কে এম জয়নুল আবেদিন, মসজিদের মুয়াজ্জিনদের মধ্যে ছিল আলী হোসেন কারী, মোহাম্মদ আবদুর রহমান , তাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ ছাবেদ আলী, হাফেজ মোঃ হাফিজুল্লাহ, সহকারি মুয়াজ্জিন আব্দুর রশিদ, মো: হাবিবুর রহমান, হাফেজ মাওলানা জাকারিয়া, হাফেজ মোঃ হাবিবুল্লাহ।