লাভ জিহাদ – প্রতারণা একটি জঘন্যতম ফাঁদ

0
115

নিলকমলঃ লাভ জিহাদ। বাহ! কতই মধুময় নাম। শুনলেই একটু একটু ভাব চলে আসে। মনে হয় যেনো, এতদিনে সত্য অবলোকন করতে পেরেছে। সত্যের জয় হয়েছে বুঝি। এতো খুশি রাখে কোথায়। নিজে জিহাদ না করুক, অন্যরা তো করছে। এই বলে বারংবার আনন্দে ঢুক গিলছে। এই যেনো হারানো সম্রারাজ্য ফিরে পাওয়ার আনন্দ। অন্যদিকে লাভ জিহাদ দেখে, রাম, বাম আর সেকুলারদের কপালে কালিমার ভাজ পড়েছে। এজন্য নাস্তিক মুরতাদ আর ইসলাম বিদ্বেষী ড্রেডমার্কাগোষ্টি একবারে উঠেপড়ে লেগেছে। তারাও একপ্রকার জিহাদ ঘোষণা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে যাদেরকে তারা মৌলবাদ বলে। যদিও তারা জিহাদে বিশ্বাসী না। তথাপি কোথাও ইসলামিক কোনো নাম দেখতে বা শুনতে পেলে, তখনই এসবকে একবারে ভন্ডুল করে দেবে বলে, চেতনার দন্ডে দন্ডায়মান হয় যায়। তবে ইসলামিক শব্দে সেকুলারদের চুলকানি বা জলাতঙ্ক থাকলেও, মুসলিম নিধনের ক্ষেত্রে একবারেই নীরব, নিস্তব্ধ।

আসল কথা এখনো আসনি। কিভাবে অবতারণা করব, বুঝতে পারছি না। বিষয়টি খবই জটিল এবং স্পর্শ কাতর। তবে বলব, খুব জটিল ভাবে না; একবারে সাদামাটা ভাবে। এজন্য প্রয়োজন কয়েকখানা উপমা। কেননা, উপমা দিলে সবারই বুঝতে সুবিধা হবে আশা করি। তবে টাক সম্প্রদায় বুঝতে পারবে কি না, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নয়। কারণ, তারা অনেকটা বধির হয়ে থাকে। আসলও কথায় আসি- সমাজ তথা দেশে সবার সাথে মিলেমিশে থাকি, এটা অধিকাংশ মানুষ চায় এবং কাম্য। মিলেমিশে থাকাটা বই-পুস্তকে একবারে উদার। কিন্তু মিলেমিশে কিভাবে থাকতে হবে, কোন সীমারেখা মানতে সেটা হলো প্রশ্ন। এই প্রশ্ন সুরাহা আজ খুবই প্রয়োজন।

মূলকথা যাওয়ার আগে, আরেকটি বিষয় আলোচনা করা বেশি দরকার এবং সময় উপযোগী। এই বিষয়ে সামন্য আলোকপাত না করলে না-ই হয়। বিষয়টি হলো- প্রেম ভালোবাসা। প্রেম-ভালোবাসাকে যুবসমাজ ভাবে স্বর্গের উপঢৌকন। তার জন্য-ই যৌবনে পা রাখা ছেলেমেয়েরা পাগলপারা হয়ে উঠে উন্মাদ সিংহের মতো। তখন মানে কোনো আইন, বুঝতে চায় কোনো সীমারেখা কিংবা জাতপাতের ব্যবধান। এজন্য লাভ ভাইরাস যুবসমাজে সংক্রমণ বেড়েই চলছে। কোনো ভাবেই তা দমন বা প্রতিকার করা যাচ্ছে না। যাবেই বা কিভাবে, যেখানে ধর্মীয় শিক্ষাকে ঐচ্ছিক করে রাখা হয়েছে। তার জন্য পরিবারগুলো নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগছে। শেষ পরিণতির কথা না-ই-বা বললাম। লাভ জিহাদ নামক প্রতারণার ফাঁদ, উগ্রত্ব হিন্দুত্ববাদের নবসৃষ্ট। তারা হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাঁধানোর জন্য হীন যড়যন্ত্র শুরু করছে। আর যে উগ্রত্ববাদের কথা বলছিলাম, এটা কোনো ধর্ম বা জাতির জন্য শোভনীয় নয়। আর এই উগ্রত্ববাদ সকল ধর্মেই কমবেশি আছে। ইহাকে প্রকৃত মুসলিম যারা, তারা সাপোর্ট করে না। এদেরকে ঘৃণার চোখে দেখে। কিন্তু উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা হীন ষড়যন্ত্রকে ঘৃণার চোখে দেখবে বড় কথা, গোপনে তাদেরকে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে।

যাইহোক, বলছিলাম কয়েকটি উপমা দেব- (১) একজন খ্রিষ্টান যদি একটি হিন্দ তথা সনাতন ধর্মালম্বী মেয়ের সাথে প্রেম করে তাহলে তা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুতর অপরাধ এবং শাস্তিযোগ্য কাজ বলে বিবেচিত হলেও সেকুলার তা-ই চায়। কিন্তু এমন অসমপ্রেম যদি হয়ে যায় তাহলে তো আইনানুযায়ী যায় বিধিসম্মত তা-ই করতে হবে, তাই তো? এবং ইহাকে ন্যায়সঙ্গত নিয়মানুযায়ী সুরাহা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

(২) একটা হিন্দু ছেলে যদি ছলেবলে কৌশলে কোনো ইয়াহুদী নারী সাথে প্রেম করে বিয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে যদি আপন সর্বস্ব হারিয়ে পেলে তাহলে ধর্মীয় ক্ষেত্রে যতই কঠোর বিধান থাকুক না কেনো সামাজিক ক্ষেত্রে তেমন একটা কঠোরতা নেই। কারণ, সবকিছু হয়ে গেছে, এখন মিটমাট হওয়া-ই বিবেচ্য বিষয়।

এখন বলুন, যদি কোন ধর্মের উগ্রবাদীগোষ্টী সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনানুযায়ী ধর্মান্তরিত করার নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে চায় তাহলে ইহা কেমন ধরনের অপরাধ? এই ক্ষেত্রে কোনো খ্রিস্টান যদি হিন্দু মেয়েকে ধর্ষণ কর পেটে বাচ্চা দিয়ে উদাও হয়ে যায়, হিন্দু ছেলে যদি ইয়াহুদী মেয়ে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায় তাহলে কি হবে? এ ক্ষেত্রে উল্টো যদি নির্লজ্জ উগ্রবাদীগোষ্ঠী উপরোক্ত অপকর্মের প্রচারণা চালায়, ইহাকে লাভ জিহাদ বলে ঘোষণা দেয় তাহলে ইহা কেমন ধরনের ধৃষ্টতা হবে, আপনারই বলেন? এমন বেহায়াপনা, নির্লজ্জতা, ধৃষ্টতাপূর্ণ অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে এবং জগন্যতম বর্বরতা নির্দেশ দিয়ে বলছে যে, যেকোনো মূল্যেই হোক মুসলিম তরুণীদের গর্ভে বাচ্চা দিতে হবে। সেটা হোক প্রেম কিংবা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অথবা মুসলিম ছদ্মবেশ ধারণ করে। এমনই উগ্র হিন্দুত্ব জঙ্গীবাদের গোষ্ঠীরা অশ্রাভ্য কর্মকাণ্ডের নীলনকশার ভিডিও অডিওসহ নানা কু-কৃর্তি সামাজিক যোগাযোগ ছড়িয়ে পড়েছে।

সমাজের ঐসব অবক্ষয়ে রোধে যদি এখনই যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে এর চরম বিপর্যয় কাল থেকে কাল পর্যন্ত গড়াতে থাকবে। কিন্তু প্রাজ্ঞ বোদ্ধা হিন্দু সমাজ উপরোক্ত অপকর্মের কেমন ধরণের ভুমিকা নেবে, জাতি তা জানতে চায়। এমব ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণের জন্য যদি হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা সৃষ্টি হয় তাহলে এর সম্পূর্ণ দায়ভার উগ্রবাদী হিন্দু যারা আছে তাদেরকে নিতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here