ইসমাইলুল করিম, লামা বান্দরবান থেকেঃ বান্দরবানের লামা পৌর শহরকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে ব্যবসায়ী, বিভিন্ন পেশাজীবী ও সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন, মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম। রবিবার দিনগত রাতে বাজার ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতি আমান উল্যাহর সভাপতিত্বে জেলা পরিষদ গেষ্ট হাউজে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র জহিরুল ইসলাম লামা বাজারকে ‘ক্লিন টাউন’ ঘোষণা দেন। এ সময় এক নাতিদীর্ঘ বক্তব্যে মেয়র আরও বলেন, সুন্দরের দিক থেকে আমরা লামা শহরবাসী পিঁছিয়ে আছি। অর্থনীতি ও কর্মচাঞ্চল্যতায় এগুতে হলে শহরকে পর্যটন উপযোগি করে তুলতে হবে। পর্যটক অনুকুল শহর তৈরি করতে হলে, পরিস্কার পরিচ্ছনতার বিকল্প নেই। শহরের হোটেল রেস্তোরাগুলো সুন্দর রাখতে হবে। এ জন্য বাজার ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম।
মতবিনিময়কালে মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বিদেশ সফরের অভিজ্ঞতার উদাহরণ টেনে জানায়, বিশ্বের উন্নত শহরে একটি টিস্যু পর্যন্ত যত্রতত্র ফেলানো হয়না। যানবাহনগুলো শৃঙ্খলা বজায় রেখে শহর অভ্যান্তরে ধীরগতিতে চলে। কেউ কাউকে ওভার টেকও করে না। তারা ট্রাফিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা পোষন করেন। তিঁনি বলেন, শহর অভ্যান্তরে রাস্তার পাশে ওয়েল্ডিং ওয়ার্কসপগুলোকে সড়কমুক্ত রাখতে হবে। বাসাবাড়ির ময়লা ফেলে ড্রেন ভরে ফেলার অভ্যাস পরিহার করার অনুরোধ জানান মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম। শহরের জনবহুল পয়েন্টগুলোতে রিক্সা ও টমটম যেন দাঁড়াতে না পারে সে বিষয়ে ট্রাফিক বিভাগের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। এছাড়া যত্রতত্র ময়লা ফেলা হলে, আইনানুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাছ বাজারের পূর্বদিকে ময়লা আবর্জনামুক্ত রাখার অনুরোধ জানিয়ে মেয়র আরও বলেন, কাপড় মার্কেটের উপর পলিথিন লাগিয়ে বস্তি সাদৃশ্য রুপ পরিহার করার পাাশাপাশি বিভিন্ন গলিগুলোকে বিপনন সাজিয়ে না রাখা যাবেনা। দোকানের সম্মুখ অংশ ভাড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা রোধ সহ ফুটপাতমুক্ত রাখার আহবান জানান মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম।
স্বাগত বক্তব্যে পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সাইফুদ্দিন বলেন, বাজার ব্যবসায়ীরা পলিথিন বর্জ্য যত্রতত্র ফেলছেন। ফলে ড্রেন বন্ধ হয়ে আবর্জনায় ভরে যায় শহর। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পেশাজীবী অনেকে বক্তব্য দেন। এদের মধ্যে লামা পৌরসভার নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন বলেন, সমস্যা নিয়ে দীর্ঘালোচনার চেয়ে সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করা দরকার। পৌরসভার জনবল সংকট রয়েছে, এরপরও পৌর কর্তৃপক্ষ যথাসাধ্য কাজ করে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা যারযার সামনে পরিস্কার রাখলে, শহর এমনিতেই সুন্দর থাকবে। শুধু পরিচ্ছন্ন কর্মীর দিকে চেয়ে থাকলে চলবেনা। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ কান্তি দাশ বলন, যিনি কাজ বেশি করেন, তার দুর্নামও বেশি।
মেয়র তাঁর দায়িত্ব পালনে দিনরাত নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। পৌরসভাকে ১ম শ্রেণী করতে তিনি আন্তরিক চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। শহর সুন্দর ও নিরাপদ রাখতে গভীর রাত পযন্ত শহরে সময় দেন মেয়র জহিরুল ইসলাম। ইতিমধ্যে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, প্রতিষ্ঠানের সামনে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেন। গোপাল বাবুর মোড় থেকে পূর্বদিকে লামামুখ সড়ক সম্প্রসারণ করার জন্য মন্ত্রী মহোদয় ইতিমধ্যে প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। বাজার ব্যবস্থাপনা জেলা পরিষদের, তাই বাজারের গলি দখল করে ভবন নির্মান বা অপসারণে মেয়র নিরুপায়। তারপরও সমন্বিত উদ্যেগে শহর বা বাজার সুন্দর করতে হবে।
পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ রফিক বলেন, মেয়র সাহেবের যতেষ্ট ক্ষমতা আছ, কিন্ত ব্যবসায়ীদের প্রতি আন্তরিক হওয়ায় ক্ষমতার প্রয়োগ করেন না। এদিকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন বাদশা বলেন, শহরে নির্মিত ভবনগুলো গলি দখল করে আগে থেকে আছে। স্থানীয় কৃষিপন্য বিপননে নিরাপদ ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎক জাহাঙ্গীর বলেন, ডাস্টবিন দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, মেয়র সাহেব হয়তো উদারতা দেখিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। যদি সেটা করা হত, হয়তো পরিবেশ অনেক সুন্দর হতে পারতো।
রিপোর্টার ক্লাবের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পৌর শহরের এ অব্যবস্থাপনা, ময়লা আবর্জনা ও গলি দখল করে বহুতল ভবন নির্মান ও পয়:নিস্কাসন ব্যবস্থা নেই,-এর জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়িরা দায়ী। যানঝট মুক্ত করতে কঠিন হতে হবে। লামা প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, সবাই মিলেমিশে কাজ করলেই পৌর এলাকা এগিয়ে যাবে । টমটম মালিক সমিতির সম্পাদক বেলাল বলেন, একা শহর সুন্দর বা যানঝটমুক্ত রাখা সম্ভব নয়। সমন্বিত উদ্দ্যেগ নিলে যানঝটমুক্ত রাখা যেতে পারে। ফুটপাত মুক্ত রাখা দরকার।
অটোরিক্সা চালক সংগঠনের নেতা ইউছুপ বলেন, যানজট মুক্ত বাজার ব্যবস্থায় ভূমিকা রাখতে পারবো; এই ক্ষেত্রে যাত্রীদের চাহিদার বিষয়টা গুরুত্বপুর্ন। তিনি বলেন, গলি দখল করে রাখার কারনে মূলতঃ দুইটি রিক্সা একসাথে চলতে পারেনা। মাছ ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্পাদক চিত্ত বাবু বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা পেলে পরিস্কার রাখা সম্ভব।