শতবর্ষের নামে চাঁদা আদায় প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা ! কোন হিসাব দিতে পারেনি প্রধান শিক্ষক ও কমিটি !! পর্ব -০৫

0
86

এম এ কাদের, সরজমিন প্রতিবেদকঃ হবিগঞ্জের মাধবপুরে ছাতিয়াইন বিশ্বনাথ হাই স্কুল এন্ড কলেজের শতবর্ষ উপলক্ষে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায়ের তথ্য মিলছে। কোন হিসাব দিতে পারেনি প্রধান শিক্ষক ও কমিটি ।

ঐ স্কুল এন্ড কলেজের অনিয়মের খবরে অনুসন্ধানে জানা যায়, ২১ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ ছাতিয়াইন বিশ্বনাথ হাই স্কুল এন্ড কলেজে শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে চাঁদা
আদায় করেন স্কুলের বর্তমান ছাত্র ছাত্রী, সাবেক ছাত্র ছাত্রীসহ মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন শিল্পকারখানা থেকে। তাছাড়া ” শিকড়ের টানে শতবর্ষ উদযাপন” একটি ম্যাগাজিনও বের করেন। আর এই ম্যাগাজিন’কে কেন্দ্র করে শতবর্ষ পালনের নাম করে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। ম্যাগাজিন বইটিতে প্রথম পাতায় শতবর্ষ উদযাপন লেখা রয়েছে কিন্তুক ভেতরে রয়েছে গৌরবের ১০ বছর উদযাপন। ম্যাগাজিন বইয়ের মধ্যে বাণী, ছড়া, কবিতা, বিজ্ঞাপনসহ কোন ছাত্র/ছাত্রী কত সনে এসএসসি পাশ করেছেন তা ছবি আকারে তুলে ধরেছেন। কিন্তুক যে ছাত্ররা এসএসসি’র গন্ডি পার হতে পারিনি তাদের’কেও দিয়ে দিলেন বিভিন্ন সনের পাশ করা ছাত্র/ছাত্রীদের সাথে। বিনিময়ে পেয়েছেন মোটা অংকের টাকা। ঐ ম্যাগাজিন বইটিতে রয়েছে ১৪টি কোম্পানির বিজ্ঞাপন। সাথে রয়েছে ব্যক্তি মালিকানাদিন ফার্ম, দোকানের বিজ্ঞাপন। প্রতিটি কোম্পানি থেকে আদায় করা হয়েছে ডোনেশন, ম্যাগাজিনের জন্য মোটা অংকের টাকা। সমাজের নেতা কর্মী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, চাকুরীজিবী, সমাজ সেবক, পীর সাহেবসহ কেহ বাদ পড়েনি চাঁদা আদায় করার ক্ষেত্রে। এমনি করে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা চাঁদা কালেকশন তথ্য বেরিয়ে আসে অনুসন্ধানকালে।

চাঁদা কালেকশন রিসিট বই ও প্রিন্টিং এর ভাউচারে উল্লেখ রয়েছে ৯১ হাজার টাকা। অনুসন্ধানে তথ্য মিলছে এখানেও অনিয়ম করেছে ৫০ হাজার টাকা।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, শতবর্ষ অনুষ্ঠানে প্রায় তিন হাজার লোকের আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে অতিথি আপ্যায়নের জন্য পোলাও ভাতের সাথে ১ পিছ
ডিম, ১ পিছ পোল্ট্রি মুরগের রান খাবারের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল । বাজার করার প্রধান দায়িত্বে ছিলেন, সহকারি শিক্ষক দীপক কান্তি রায়। আর এই অনুষ্ঠানের শুধু মসলার বাজারের হিসেব দেখানো হয়েছিল প্রায় ২ লক্ষ টাকা। এখানেও পুকুর চুরির মত দুর্নীতি করেছেন বলে অনুসন্ধানে তথ্য মিলছে।

এই শতবর্ষ অনুষ্ঠানের বিষয়ে অনুষ্ঠান পরিচালনা কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালনে ছিলেন, ঐতিহ্যবাহী খান্দুরা দরবার শরীফে সৈয়দ সুহেল সাহেব। এই বিষয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এই অনুষ্ঠানে আমাকে আহ্বায়কের
দায়িত্ব পালনের জন্য যখন বলা হয়েছিল তখন আমি সম্মতি দিতে অস্বীকার করি। পরে আমাকে অনেক অনুরোধ করে আহ্বায়ক বানানো হয়েছিল। আমি এই অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে বেশ কিছু উপ কমিটি গঠন করেছিলাম। অনুষ্ঠান শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রেজুলেশনের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ, সভাপতি মোঃ শামছু মিয়া, (সহকারী শিক্ষক) দীপক কান্তি রায়সহ বেশ কিছু ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানের জন্য কত টাকা চাঁদা কালেকশন করা হয়েছিল জানতে চাইলে জবাবে সৈয়দ সুহেল সাহেব বলেন, আমি সঠিক বলতে পারব না। তবে অনুষ্ঠান শেষে প্রধান শিক্ষকের নিকট সকল হিসাব কিতাব বুজিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এবং তার একটা রেজুলেশনও করা হয়েছিল। যদি প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করেন তাহলে সব কিছু জানতে পারবেন।

আহ্বায়ক সৈয়দ সুহেল সাহেবের বরাতে প্রধান শিক্ষকের সাথে দেখা করে কথা বললে তিনি কোন কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন। রেজুলেশনের কথা জিজ্ঞেসা করার পর তিনি বলেন, আমার কাছে শতবর্ষের কোন হিসাব কিতাব নেই। কত টাকা খরচ হয়েছিল শতবর্ষ অনুষ্ঠানে জিজ্ঞেসা করার পর আবার তিনি আগের ন্যায় সহজ উত্তর দিয়ে বলেন, আমি এই সবের কিছুই জানি না। শতবর্ষ অনুষ্ঠানের ম্যাগাজিন বইটির বিষয়ে জানতে চাইলে সোজাসাপ্টা বললেন, অনার্থক আমাকে প্রশ্ন করে কোন লাভ নেই আমি কোন কিছু জানিনা। সর্বশেষে শতবর্ষের ম্যাগাজিন বইটি কেন বিতরণ করা হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি, পূর্বের ন্যায় একইভাবে উত্তর দিয়ে দিলেন জানি না ৷

অন্যদিকে সহকারী শিক্ষক দীপক কান্তি রায় এর সাথে প্রায় দুই লক্ষ টাকার মসলার বাজারের বিষয়ে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বাজার কত টাকার করা হয়েছে তার হিসেব প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করলে জানতে পারবেন।
পূর্ণরায় প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন তাও আমি জানিনা “যেই লাউ সেই কদু “।

অনুসন্ধানেকালে জানা যায়, শতবর্ষ অনুষ্ঠান ৩ হাজার লোকের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে খাবারের টুকেনও করা হয়েছিল। কিন্তুক টুকেন হাতে থাকা অনেক ব্যক্তি খাবার না পেয়ে উপবাসে ফিরতে হয়েছে বাড়িতে এমন অভিযোগও বেরিয়ে আসে তথ্য সংগ্রহকালে।

নানা রকম দুর্নীতি ও অনিয়মের পাহাড় সমমান অভিযোগ জমিয়েছেন ওই প্রধান শিক্ষক। কাগজপত্রে কোন হিসাব দিতে পারেননি প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ।

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শামছু মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্কুল এন্ড কলেজের অনিয়ম ও দুর্নীতির ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশের জের ধরে তার উপর তদন্ত করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিক্ষা অফিসার’কে দায়িত্ব দিয়েছে এবং তদন্তও করা হয়েছে গত ৯ই মে বৃহস্পতিবার। যার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রমানিত হবে তার উপর শাস্তি দিবে প্রশাসন। এই তদন্তের সাথে আমি একমত পোষণ করছি। যারা অপরাধের সাথে জড়িত তাদের শাস্তি হোক।

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফয়সাল এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে । কোন অনিয়ম বা দুর্নীতি কারো বিরুদ্ধে প্রমানিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা গ্রহণ করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here