এম এ কাদেরঃ ব্রাহ্মণ্যবাড়ীয়া জেলাধীন নাসির নগর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ফান্দাউক দরবার শরীফের পীর ও বাংলাদেশ আঞ্জুমানে খাদিমুল ইসলামের আমীর শাহ সূফী আলহাজ্ব মাওলানা মুফতি সৈয়দ সালেহ আহমাদ মামুন আল হোসাইনী বলেছেন,বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ তিনি ছিলেন জীবন ও বিপ্লবের শান্তির প্রতীক। ছিলেন ঐক্যের মশাল, নিরাপত্তা ও কল্যাণের বার্তাবাহক। মানবজাতিকে তিনি সত্য, সরল ও শান্তির পথে আহবান করেছেন। ডেকেছেন মিল্লাতে ইবরাহীমের দিকে। পরিচালিত করেছেন আদর্শের পথে, যেন তারা ইহকাল-পরকালে শান্তি লাভ করে সফল জীবন অর্জন করতে পারে। রাসূল সা.-কে শান্তি ও কল্যাণের জন্য বিশ্ববাসীর রহমত হিসেবে আখ্যায়িত করে আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘আমি আপনাকে বিশ্বজগতের রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি।’
শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য হযরত মুহাম্মদ সা. শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি নৈতিকতা ও চারিত্রিক উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করেন। ইসলামের দৃষ্টিতে প্রত্যেক মানুষের নৈতিকতা ও চারিত্রিক উন্নয়নের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক জীবনে নৈতিকতা হচ্ছে একটি বড় শক্তি। নৈতিকতা ও চারিত্রিক উন্নয়নে ইসলাম বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছে। নৈতিকতা বিরোধী কোনো কাজ হলে কুরআন সুন্নার আইন অনুযায়ী বিশ্বনবীর খলীফাগণ রায় প্রদান করতেন। ফলে আল্লাহর ভয় এবং দুনিয়ায় শান্তি ও অপমানের ভয়ে কেউ নৈতিকতা বিরোধী কাজ করার সাহস পেত না। এ কথা সার্বজনীন স্বীকৃত যে, মানুষের মধ্যে নৈতিকতা না থাকলে সমাজ ধ্বংস হয়ে যেত।
মানবজীবনের দুটি দিক রয়েছে : আদর্শ সমাজ ও উত্তম চরিত্র গঠনে ইল্মে তাসাউফের কোন বিকল্প নেই। মানুষের দুটি দিক রয়েছে। একটি বাহ্যিক বা প্রকাশ্য দিক এবং অপরটি আত্মিক বা অপ্রকাশ্য দিক। ইসলাম মানুষের বাহ্যিক জীবনব্যবস্থা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় বিধান দিয়েছে। এর নাম শরী‘আত। অপরদিকে মানুষের আত্মিক বা অদৃশ্য দিক নিয়ন্ত্রণের জন্যও নীতি-আদর্শ রয়েছে-এর নাম ইল্মে তাসাউফ। মানুষের কেবল বাহ্যিক দিক পরিচালিত হবে ইসলামী জীবন বিধানের আলোকে, আর অন্তর পরিচালিত হবে নিজের ইচ্ছা মাফিক- তা কখনো হতে পারে না। মানুষের অন্তর নিয়ন্ত্রণ, পরিচালন ও পরিশোধনের জন্য ইসলামে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা রয়েছে। এর প্রচলিত নাম হচ্ছে ইল্মে তাসাউফ।
পীর সাহেব আরও বলেন, খাতমে নুবুয়্যাত অস্বীকারকারী কাদিয়ানী স¤প্রদায় আজ সারাদেশকে উত্তাল করে ফেলেছে। কাদিয়ানীদের সাথে আমাদের ব্যক্তিগত কোন বিরোধ নেই। কাদিয়ানীরা মুসলিম উম্মাহর সম্মিলিত সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাফের। মনে রাখতে হবে এই দেশের ইসলাম প্রিয় মানুষ ঈমান রক্ষার জন্য বুকে তাজা রক্ত ঢেলে দিতে একটু পিছ-পা হবেনা। বর্তমান কাদিয়ানী স¤প্রদায় সরকারের সাথে ইসলাম ও মুসলমানকে বিচ্ছিন্ন করে পশ্চিমাদের রাজত্ব ও মতবাদ কায়েম করতে চায়। তারা কখনোই মুসলিম পরিচয়ে এ দেশে থাকতে পারে না। আমি ঐতিহ্যবাহী ফান্দাউক দরবার শরীফের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি জোরদাবী জানাচ্ছি কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রের ন্যায় আমাদের দেশেও রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা হোক। দাবী আদায়ে হক্কানী দরবার ও পীর মাশায়েখ, আলেম-উলামাদের নেতৃত্ব সকল মুসলমান ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
ঐতিহ্যবাহী ফান্দাউক দরবার শরীফের দুই দিন ব্যাপী কেন্দ্রীয় বার্ষিক ইছালে ছাওয়াব মাহফিলের প্রথম দিন ও দ্বিতীয় দিন তরিকার তালিম ও তারবিয়াত প্রদান পূর্বক দরবারের বর্তমান পীর আলহাজ্ব মাওলানা মুফতি সৈয়দ সালেহ আহমাদ মামুন আল-হোসাইনী আগত লাখো লাখো ভক্ত ও মুরিদদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন। ১১ মার্চ বাদ জুমা পবিত্র ফাতেহা শরীফ পাঠ করার মাধ্যমে মাহফিলের কার্যক্রম শুরু হয়।
২য় দিন ( ১২ই মার্চ) ওয়াজ করেন, বাংলাদেশ জামিয়াতুল মুদার্রিসিনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা সাব্বির আহমদ মোমতাজী, বাংলাদেশ জামিয়াতুল মুদার্রিসিনের সহ-সভাপতি ও মৌকারা দরবার শরীফের পীর আলহাজ্ব মাওলানা শাহ মোহাম্মদ নেছারুদ্দীন ওয়ালীউল্লাহী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর মাওলানা মুফতি কাফিল উদ্দিন সরকার ছালেহী, মুফতি ওসমান গনি ছালেহী, মাও: এবিএম আব্দুস সালাম, শাহসূফী আব্দুর নূর, সাইয়্যেদ মোঃ ইমদাদ উল্লাহ আব্বাসী জৈনপুরী, মৌকারা দরবার শরীফের পীরজাদা বিশিষ্ট কলামিস্ট ও ছাত্রসালেকিনের সভাপতি মাওলানা শাহ মাসুদ। মাহফিলের সার্বিক ব্যবস্থাপনা দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন, বাংলাদেশ আঞ্জুমানে খাদিমুল ইসলামের নায়েবে আমীর পীরজাদা আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুফতি শাহ সূফী সৈয়দ মঈনুদ্দিন আহমাদ আল হোসাইনী ও উপস্থাপনায় ছিলেন, বাংলাদেশ আঞ্জুমানে ইসলামী ছাত্রমহলের সভাপতি পীরজাদা আলহাজ্ব মাওঃ সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক আল হোসাইনী ও পীরজাদা আলহাজ্ব সৈয়দ বাকের মস্তোফা আল-হোসাইনী।
ফান্দাউক দরবার শরীফ কর্তৃক আয়োজিত দুইদিন ব্যাপী ইছালে ছাওয়াব মাহফিল ঘিরে দেশের পূর্বাঞ্চল বৃহত্তর সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও বৃহত্তর কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা নাসিরনগর উপজেলা সহ ফান্দাউকের সভায় সর্বত্র উৎসব মূখর হয়ে উঠে। দূর-দূরান্ত থেকে লাখো লাখো মুরিদান, আশেকান, ও ভক্তবৃন্দ মাহফিলের অংশ গ্রহনের মধ্য দিয়ে পূণ্যভূমি ফান্দাউক অলি-আউলিয়া প্রেমিক ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মিলনমেলায় এক অভূতপূর্ব ভাবগাম্ভি^র্যের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ২য় দিনের মাহফিলে আগত মুসল্লিদের অংশগ্রহণে মাজার শরীফসহ মাহফিলের এরিয়া লোকে লোকারণ্যে এক অদ্ভুদ পরিবেশের সৃষ্ঠি হয়। উক্ত ইছালে ছাওয়াব মাহফিলে দেশ বরণ্যের বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবীদ, পীর মাশায়েখ ও ওলামায়ে কেরামগন ওয়াজ নছিয়ত করেন। মাহফিলের শুরুতে শুক্রবার বাদ জুম্মা ফাতেহা শরীফ, খতমে কোরআন, খতমে বোখারী, মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে সভার কাজ শুরু হয়। ২য় দিন দরবার শরীফের উন্নতি, সাফল্য, বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি, দেশের কল্যাণ, মঙ্গল এবং মুসলিম বিশ্বের ঐক্য, শান্তি কামনা করে পীর সাহেব সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকট মোনাজাত করেন।