আলিফ আরিফা, গাজীপুর প্রতিনিধিঃ একদল কালো মুখোশধারী লোক অস্ত্রের মুখে গাজীপুর মহানগরীর লক্ষিপুরা-মারিয়ালি থেকে এক মাদ্রাসার মোতাওয়াল্লিকে একটি নম্বরবিহীন হায়েস গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। মাদ্রাসার মোতাওয়াল্লি সোলাইমান হোসেন তৌকি (২৬) গাজীপুর মহানগরীর লক্ষিপুরার বাসিন্দা। গত ২রা আগস্ট রাত ৮টার দিকে তাকে অপহরণ করার খবর কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে জানতে পারেন তৌকির পরিবার।
ঘন্টাখানেক পর রাত ৯টার দিকে তৌকির বন্ধু রিফাদের মোবাইলে খবর আসে তৌকিকে ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন সদর থানা, ডিবি, সিআইডি এবং সিবিআই সহ বিভিন্ন অফিসে খোঁজ নিয়ে তৌকির পরিবার জানতে পারেন, তাঁদের কাছে তৌকির কোন তথ্য নাই।
এরপর দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে তৌকির বোন হামিদাকে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন দিয়ে বলা হয়, উত্তরা পশ্চিম থানাধীন আব্দুল্লাহপুর ১ নং সেক্টর থেকে ৩০০ গ্রাম হেরোইনসহ তৌকিকে আটক করা হয়েছে।
পরবর্তীতে হেরোইনসহ আটক দেখিয়ে তৌকিকে উত্তরা পশ্চিম থানার ০৫ (৮) ২৩ নং মাদক মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়।
গত ৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে গাজীপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তৌকির স্ত্রী ফাতেমা আক্তার। এ সময় তার পিতা-মাতা, তিন বছরের সন্তান এবং তৌকির পক্ষের দুইজন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
তৌকির স্ত্রী ফাতেমা আক্তার বলেন, আমার স্বামী তার পিতা হোসেন আলীর ওয়াকফকৃত হোসেনিয়া দাখিল মাদ্রাসার মোতাওয়াল্লি। মাদকের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় আমাদের এলাকার কাউন্সিলর মাদক নির্মূলের জন্য একটি কমিটি গঠন করেন। তৌকি ওই কমিটির ১নং সদস্য। এই মাদক নির্মূল কমিটি এলাকার লোকজন নিয়ে মাদক বিরোধি মানববন্ধন করেন এবং ৪১জন মাদক কারবারীর নাম প্রকাশ করেন। এতে কয়েকজন মাদক কারবারী গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর চিহ্নিত মাদক কারবারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এবং গ্রেপ্তারদের মধ্যে এক আসামি সজিব আমার স্বামীর বিরুদ্ধে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। কিন্তু আমার স্বামী নির্দোষ হওয়ায় আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ পূর্বক জামিনের আবেদন করেন। আদালত তার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।
তৌকির স্ত্রী ফাতেমা আক্তার আরও বলেন, গত ২ আগস্ট রাতে আমার বাসার পাশেই একটি দোকানে বসা ছিলো আমার স্বামী তৌকি। এমন সময় মুখে কালো মাস্ক পরিহিত ৫/৬ ব্যক্তি স্থানীয়দের সামনেই আমার স্বামীকে অস্ত্র ধরে মুখ, হাত-পা বেঁধে একটি নম্বরবিহীন হায়েস গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। একঘন্টা পর তার বন্ধু রিফাদকে ফোন দিয়ে বলা হয়, তৌকিকে ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। পরে আমরা গাজীপুর মেট্রোপলিটন সদর থানা, ডিবি, সিআইডি এবং সিবিআই সহ বিভিন্ন অফিসে খোঁজ নেই। কিন্তু তাঁদের কাছে তৌকির কোন তথ্য নেই বলে জানানো হয়। এরপর রাত সাড়ে ৩টার দিকে আমার স্বামীর বোন হামিদাকে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে বলা হয়, উত্তরা পশ্চিম থানাধীন আব্দুল্লাহপুর ১নং সেক্টর থেকে ৩০০ গ্রাম হেরোইনসহ তৌকিকে আটক করা হয়েছে। ধারণা করছি, এলাকার ক্ষুব্ধ মাদক ব্যবসায়ীদের প্ররোচনায় পুলিশকে প্রভাবিত করে সাজানো মামলায় তৌকিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আমি অসহায় নারী হয়ে ন্যায় বিচারের আশায় শিশু সন্তানকে নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার বরাবর লিখিত আবেদন করেছি। তবুও ৩ মাস ধরে আমার স্বামী তৌকি বিনা দোষে হাজতবাস করছেন। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচার দাবি করছি।
এই মামলাটি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এরপর ঢাকা উত্তর উপ পুলিশ কমিশনার জানান, মামলাটির তদন্ত চলছে। ভুক্তভোগীর পরিবারকে সুষ্ঠু বিচার পাইয়ে দেওয়া হবে। গ্লোবাল টিভির অনুসন্ধানী রিপোর্টেও মিলেনি সাক্ষীদের সাক্ষী। ভুক্তভোগী এখনো কোন শুরুহা পায়নি।
তারা সুষ্ঠু তদন্ত ও মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর জন্য দায়ী পুলিশ অফিসারের বিচার দাবি করেছেন। ভুক্তভোগীর স্ত্রী চার মাসের গর্ভবতী ও তিন বছরের এক শিশু সন্তান নিয়ে অসহায় দিনযাপন করছেন। তিনি দেশবাসী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছেন।