মাধবপুর প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার খড়কি গ্রামের আবু তাহের মিয়ার পুত্র সালাউদ্দিন (৪০)। গত ৮ বছরে অঢেল অর্থ বিত্ত ও ভূ-সম্পত্তির পাহাড় গড়ে এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু তিনি। শুধু অর্থ সম্পদেই নয়,বর্তমানে এলাকায় নিজেকে জাহির করেছেন বিরাট ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে। গড়েছেন দৃষ্টি নন্দন বিশাল অট্টালিকা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নামে বেনামে ক্রয় করছেন কোটি কোটি টাকার ভূ-সম্পত্তি। সরকারি রাজস্ব
ফাঁকি এবং সরল বিশ্বাসে আসা অসহায় লোকদের জমি বিক্রির কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
২০১২ সালে ১০৭ নম্বর সনদে চারাভাঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখার অনুমোতি পেয়ে সরকারি রাজস্বের উৎসকর, স্ট্যাম্প ও রেজিস্ট্রেশন ফি আত্মসাৎ করা শুরু করেন তিনি। শুধু রাজস্ব আত্মসাৎ করেই ক্ষান্ত
হয়নি মাদরাসায় পড়াশোনা করা সালাহ উদ্দিন, রপ্ত করেছেন জমির মৌজা, শ্রেণি পরিবর্তন, অল্প ফি’তে হেবা কিংবা আমমোক্তার নামা দলিল হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করে শিরোনাম পরিবর্তন করে সাফ কবলাতে রুপান্তরসহ স্বাক্ষর, স্ট্যাম্প জাল জালিয়াতি। অসহায় নিরীহ লোকদের জমি বিক্রির কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আর এসবের মাধ্যমে দলিল লেখক সালাহ উদ্দিন গত ৮ বছরে অঢেল অর্থ বিত্ত ও ভূ-সম্পত্তির
মালিক হয়েছেন।গত ৩ ফেব্রুয়ারি সিলেট বিভাগের অতিরিক্ত দ্বায়িত্বে থাকা ইন্সপেক্টর অফ রেজিস্ট্রেশন অফিস (আইআরও)খন্দকার হুমায়ূন কবির স্বাক্ষরিত স্মারকে দলিল লেখক সালাহ উদ্দিনের কাছ থেকে সরকারি ঘাটতি রাজস্ব
আদায় করে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করে তার বিরুদ্ধে
ফৌজদারী মামলা রুজু করা হয়। এবং সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের আঙিনায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করার জন্য বলা হয়েছিল। এরই প্রেক্ষিতে গত ৩রা এপ্রিল ৪৭৮১ এবং ৫৩০৮ এই দুটি দলিলের স্ট্যাম্প বাবদ ১ লাখ ৮৫ হাজার ৫শ ২০, রেজিষ্ট্রেশন ফি বাবদ ১ লাখ ২৩ হাজার ৬শ
হত্যা মামলার আসামী করা হয়েছে, দ্রুত বিচার আইনে মামলাসহ ৪টি মিথ্যা মামলায় ১২২ দিন কারাবাস করতে হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী জামাল মিয়ার। সালাহ উদ্দিন ও তার সহযোগিদের হুমকিতে অভিযোগকারী জামাল ও পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
উৎসকর ৬১ হাজার ৮শ’ ৪০ এবং স্থানীয় সরকার
কর বাবদ ১ লাখ ৮৫ হাজার ৫শ’ ২০ টাকাসহ মোট রাজস্ব ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৫শ ৬০টাকা ৭ কার্য দিবসের মধ্যে চালানের মাধ্যমে পরিশোধ করার নোটিশ প্রদান করা হয়। তবে এতে কর্ণপাত করেননি সালাহ উদ্দিন।
তদন্তে দুর্নীতির প্রমাণিত হলেও সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু তো দূরের কথা একটি আদেশও বাস্তবায়ন হয়নি। বরং উল্টো সালাউদ্দিন হবিগঞ্জ আদালতে সাব রেজিস্ট্রার, জেলা রেজিস্ট্রারসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ৯৭
প্রমাণিত হওয়ায় আদালত খারিজ করে দেয়।
নম্বর স্বত্ব মামলা দায়ের করেছিল, যা পরবর্তিতে মিথ্যা জানা যায়, সালাহ উদ্দিনের রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তার প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির বিরুদ্ধে কথা বললে ফেঁসে যেতে হয় মিথ্যা মামলায়, শিকার
হতে হয় হামলারও। এমনই এক ভূক্তভোগী উপজেলার আলীর স্ত্রী রহিমা খাতুন। গত বছরের জুন মাসে দলিল বাঘাসুরা ইউনিয়নের শিবজয় নগর গ্রামের মৃত আছিব নামে রেকর্ডিয় ৪৫ শতক ভূমি জাল কাগজে ৭৩৪৯ নম্বর লেখক সালাহ উদ্দিন ভুয়া দাতা সাজিয়ে তার স্বামীর
আমমোক্তার দলিল সৃজন করে অন্যত্র বিক্রির অভিযোগ দাখিল করেছেন সাব-রেজিস্ট্রার বরাবর।একই ইউনিয়নের হরিতলা গ্রামের সমসু মিয়ার ছেলে জামাল মিয়া (৩৮)। ১৯৭ শতক পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রির ৭ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকাসহ সরকারের রাজস্ব ৭৮ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ করায় সালাউদ্দিনের ইশারায় মৌলভীবাজার মডেল থানায় ২০১৪ সালের গত ২৮ জুলাই জামাল মিয়া মাধবপুর থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়রি করেন। শুধু জামালই নয়, প্রতারক সালাউদ্দিনের খপ্পরে পড়ে চলতি বছরের ২৭ মে হরিতলা গ্রামের বিধবা নুর জাহান বেগম তার ২৫৮শতক ভূমি বিক্রির ৩ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা খুইয়েছেন। এ ঘটনায় নুরজাহান বেগম সালাউদ্দিনের অফিস কক্ষে সশস্ত্র সহযোগিদের নিয়ে জোর পূর্বক ৩ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা নেওয়ার অভিযোগ এনে হবিগঞ্জ আদালতে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে সি আর মামলা দায়ের করলে আদালতের নির্দেশে মাধবপুর থানায়।
গত ১৫ জুন জি আর মামলা হিসেবে রুজু হয়ে
তদন্তাধীন আছে। শুধু রহিমা, জামাল কিংবা নুরজাহান নয় সালাহ উদ্দিনের জাল জালিয়াতিতে পথে বসা আরও শতাধিক ভূক্তভোগী পাওয়া যাবে অত্র অঞ্চলে।
২০১২ সাল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সালাহ উদ্দিনের লিখিত দলিলগুলো তদন্ত করলে সরকারের কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে অভিযোগকারীদের দাবি।
মোবাইল ফোনে সালাহ উদ্দিনের বলেন, স্টার
সিরামিক্স, আকিজ গ্রুপ ও ব্যক্তি বিশেষের দলিল
ব্যতিত শুধু বাদশা কোম্পানীর প্রায় ৩শ ৪৭ কোটি
টাকার দলিল সম্পাদন করেছি। জেলা রেজিস্ট্রারের অফিস থেকে আমাকে হয়রানি করার জন্য ঘাটতি রাজস্ব আদায়ের নোটিশ করার কারণে টাকাগুলো জমা দেইনি। হাইকোর্টে রীট করে সনদ বাতিলের বিষয়টি
স্থগিত করা হয়েছে।