বিভাগীয় প্রতিনিধিঃ গেলো বছরের ১০ অক্টোবর দিন পেরিয়ে ভোর রাতের দিকে সিলেট নগরীর কাষ্টঘর স্যুইপার কলোনী থেকে রায়হান আহমদকে বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে যায় ইনচার্জ এসআই আকবর ও তার সহকারীরা। পরে ১১ অক্টোবর ভোরে রায়হানের নিথর দেহ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করে পুলিশ।
পরদিন ১২ অক্টোবর নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে ১৩ অক্টোবর পুলিশ হেড কোয়ার্টারের নির্দেশে এ মামলার তদন্তের দায়িত্ব নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
আইন অনুযায়ী ১২০ দিনের ভিতর মামলার চার্জশিট প্রদানের কথা থাকলেও দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ মাস অতিক্রম হলেও এখনো এ মামলার চার্জশিট দিতে পারেনি রাষ্ট্রীয় এই তদন্ত সংস্থাটি। এর ভেতর কয়েক দফায় সময় বাড়ানো হলেও চলতি মাসের ভিতরেই চার্জশিট দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের পুলিশ সুপার খালেদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের তদন্ত শেষ। কিছু টেকনিক্যাল বিষয় বাকি থাকায় আমরা এগুলো শেষ বারের মতো যাচাইবাছাই করছি। এ মাসের ভিতরেই চার্জশিট দেওয়া হবে।’
এ মামলার চার্জশিটের জন্য সিলেটের মানুষ অধির আগ্রহে অপেক্ষা করলেও কয়ে দফায় বাড়ানো হয়েছে সময়। এমনকি কবে এ মামলার চার্জশিট কবে দেওয়া হবে কিংবা কতজনকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে সে বিষয়টি নিয়েও আছে মানুষের ব্যাপক আগ্রহ। তাছাড়া ঘটনার পর নির্যাতনের দৃশ্য ধারণ করা সিসিটিভির হার্ডডিস্ক গায়েব করে লাপাত্তা হয়ে যাওয়া নোমানকেও এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এমন অবস্থায় নোমানকে চার্জশিটে অভিযুক্ত করা হবে কি না তা নিয়েও আছে প্রশ্ন।
এমন অবস্থায় সন্দিহান নিহত রায়হান আহমদের মা সালমা বেগম। তিনি বলেন, ‘সবাইকে গ্রেপ্তার করা হলো, কিন্তু নোমানকে এখনো গ্রেপ্তার করা হলো না কেন তা নিয়ে আমি সন্দিহান। নোমান যে কোথায় পালাল তার তথ্য এখন বের করতে পারলো না পিবিআই। তাকে ধরতে তাদের এতো গাফিলতি কেন এটা আমি বুঝে উঠতে পারছি না।’
তবে নোমানের ব্যাপারে এখনই কিছু বলতে পারছে না পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তারা বলছে, ‘চার্জশিট না দেওয়া পর্যন্ত এখনই নোমানের ব্যাপারে কিছু জানানো যাচ্ছে না। কিংবা এ মামলার চার্জশিটে কতজনকে অভিযুক্ত করা হবে সে ব্যাপারেও কিছু আপাতত জানানো যাচ্ছে না।’
এদিকে চার্জশিট দিতে সময়ক্ষেপণের কারণে হতাশ সালমা বেগম আছেন শংকায়। তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ আন চার্জশিট দেওয়া হয়েছে ততক্ষণ কিছুই বুঝতে পারছি না। এক সপ্তাহ, দুই সপ্তাহ করে করে পিবিআই কেবল সময় নিচ্ছে। তাদের সাথে যোগাযোগ করলেই বলে এই সপ্তাহে হয়ে যাবে, আগামী সপ্তাহে হয়ে যাবে। কিন্তু তারা চার্জশিট দিচ্ছে না।’
পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু নিরোধ আইনে যথেষ্ট ফাঁক থাকায় অপরাধীরা সুবিধা পেতে পারে। এজন্য পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু নিরোধ আইনের পাশাপাশি দণ্ডবিধি যুক্ত করার ব্যাপারে তাগিদ দিলেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম।