বিশেষ প্রতিবেদক, সিলেটঃ আইন সবার জন্য সমান তার আরেক নজিরবিহীন প্রমাণ পেলেন বন্দরবাজার রংমহল টাওয়ারের একজন কাপড়ের দোকান ব্যবসায়ী খসরুল ইসলাম শামসুল।
শিপারের সর্বচ্চ ক্ষমতা ব্যবহার করেও তার অপকর্ম পুলিশের চোখ ফাঁকি দেওয়া সম্ভব হয়নি। তা আজ প্রমানিত হল দায়ের করা মামলার চার্জশিটের দিকে নজর রাখায়।
সিলেটে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ডিজিটাল কায়দায় ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতারণা করার কারণে মোহনা টিভির সিলেট ব্যুরো প্রধান পরিচয়ধারী দুুই ভয়ঙ্কর প্রতারকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন এক ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী।
অভিযোগ দায়ের করেন- বন্দরবাজার রংমহল টাওয়ারের ব্যবসায়ী ও গোয়াইনঘাট থানার জাতুগ্রাম এলাকার আজিজুর রহমানের পুত্র খসরুল ইসলাম শামসুল।
অভিযুক্তরা হচ্ছে- মোহনা টিভির সিলেট ব্যুরো প্রধান ও কানাইঘাট থানার ঝিঙ্গাবাড়ি এলাকার আব্দুল মালিকের পুত্র আব্দুল আউয়াল চৌধুরী শিপার (৪১) এবং তার সহযোগী ঢাকা, শহিদবাগ ৮৬৬ এর বাসিন্দা আনোয়ার আলী চৌধুরীর পুত্র লুৎফুর হায়দার চৌধুরী (৫৫)
প্রতারণার মাধ্যমে লাখো-কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে আব্দুল আউয়াল চৌধুরী শিপারসহ তার সহযোগীর বিরুদ্ধে। ‘ভয়ঙ্কর প্রতারক’ বলে খ্যাত এই আব্দুল আউয়াল চৌধুরী শিপারের মূল বাড়ি সিলেটের কানাইঘাটে হলেও বর্তমানে সিলেট মেট্রাপলিটন শাহপরাণ (রহ.) থানাধীন মেজরটিলার মুহাম্মদপুরের ইসলামপুরে তার বসবাস। মিডিয়াঙ্গণে শিপার চৌধুরী নামে তার অধিক পরিচিতি। গত (১ই ডিসেম্বর) সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবরে এমন অভিযোগ করেন ব্যবসায়ী খসরুল ইসলাম শামসুল। পুলিশ কমিশনারের কাছে দেওয়া অভিযোগের পাশাপাশি আব্দুল আউয়াল চৌধুরী শিপারসহ তার সহযোগীর বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক পৃথক মামলার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে খসরুল ইসলাম শামসুল গত (১৩ই ডিসেম্বর) সিলেটের অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১নং আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। যাহার মামলা নং-(নং-১১২১/২০২১)। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে (১৪ই ডিসেম্বর) কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জকে মামলাটি এফআইআর (রেকর্ড) করে আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ প্রধান করেন। আদালতের নির্দেশ পেয়ে কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ গত বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে মামলাটি এফআইআর (রেকর্ড) করেন। যাহারা কোতোয়ালি থানার মামলা নং- (৪৭/৯৬২)। কমিশনারের বরাবরে অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে আড়ালে-আবড়ালে পালিয়ে বেড়ান প্রতারক শিপার ও তার সহযোগী। পরবর্তীতে পুলিশ তাদের আটক করতে সক্ষম হয়।
অভিযোগে সুত্রে জানা গেছে- ভুক্তভোগী বন্দরবাজার রংমহল টাওয়ারের একজন কাপড়ের ব্যবসায়ী। আর কাপড় কেনাকাটার মাধ্যমেই প্রতারক শিপার চৌধুরীর সাথে তার প্রথম পরিচয় হয়। তার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার বেশ কয়েকদিন পর প্রতারক শিপার চৌধুরী তাকে বিভিন্ন সময়ে বহু বিদেশী এনজিও’র প্রলোভন দেখিয়ে অনেক সময় বড় অংকে টাকা বিনিয়োগ করতে কুপরামর্শ দেয়। প্রতারকের এই কুপরামর্শে তিনি সম্মতি জানালে বৎসরখানেক তাকে বহু এনজিও’র প্রোফাইল ল্যাপটপের মাধ্যমে দেখিয়ে ও তাকে প্রতারক শিপার ঢাকায় নিয়ে তার অপর সহযোগী প্রতারক লুৎফুর হায়দার চৌধুরীর মাধ্যমে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করে। পরে “ডিসেবল রিহ্যাবিলিটেশন এনডেভর এন্ড মুভমেন্ট” (ড্রিম) নামক এনজিও যাহার রেজিষ্ট্রেশন নং- (ঢ-০৬২০৮)। এই সংস্থার বিবিধ কার্যাবলী দেখিয়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীকে প্রতিষ্ঠানের সহ-সভাপতি পদ নিতে প্ররোচিত করে এবং তাকে অর্থ বিনিয়োগ করতে বলে প্রতারক শিপার ও তার সহযোগী। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীকে কোটি কোটি টাকার স্বপ্ন দেখিয়ে তাকে তাদের ধোকায় ফেলে নগদ নয় লক্ষ চুয়াত্তর হাজার (৯,৭৪,০০০/=) টাকা তার নিকট হইতে হাতিয়ে নেয় প্রতারক শিপার চৌধুরী ও তার সহযোগী। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী যে এই ডিজিটাল প্রতারকদের টার্গেট ছিলেন তিনি টাকা লেনদেনের পরে তা টের পান। এই ভুক্তভোগীর মত আরো অনেকেই এই প্রতারকদের ডিজিটাল প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী অভিযোগে আরো উল্লেখ করেন- তার পাশ্ববর্তী অন্য আরেকজন ব্যবসায়ী ছাড়াও আরো অনেকের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রলোভনে প্রতারক শিপার বহু টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন। এরপর তিনি সাংবাদিক নামধারী প্রতারক শিপার চৌধুরীর নিকট তার দেয়া নগদ টাকাগুলো ফেরত চাইলে সে নিজেকে মোহনা টেলিভিশনের সিলেট ব্যুরো প্রধান পরিচয় দিয়ে তাকে ভয়ভীতি ও নানা রকমের হুমকি প্রদান করে এবং তার সাথে প্রসাশনের উর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তার সু-সম্পর্ক রয়েছে বলে ভয় দেখিয়ে এ বিষয়ে আইনের আশ্রয় নিতেও হুমকি প্রদর্শন করে। পরে প্রতারক শিপারের অপর সহযোগী প্রতারক লুৎফর হায়দার চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান তিনি এসব টাকার বিষয়ে কোন কিছু জানেন না এ বিষয়ে শিপার চৌধুরীর সাথে আলাপ করার জন্য।
অভিযোগে আরো প্রকাশ- আব্দুল আউয়াল চৌধুরী ওরফে শিপার চৌধুরী নিজেকে মোহনা টেলিভিশন সিলেটের ব্যুরো প্রধান, সিলেট প্রসক্লাব’র সদস্য, সিলেটস্থ টিভি চ্যানেল ইমজার সদস্য, একাধিক দৈনিক ও অনলাইন পত্রিকার গুরুত্বপূর্ন দায়িত্বশীল পদে রয়েছেন বলে দাবী করেন, সরকারসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলে তার প্রভাব রয়েছে। এমন প্রভাবের প্রচার করে তিনি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি পাইয়ে দেওয়ার, কোটি কোটি টাকার ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়ার, সরকার দলে পদোন্নতি, বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে উচ্চ বেতনে চাকরি, এমনকি পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রমোশন পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণা করে চলেছেন। প্রতারণার মাধ্যমে ইতিমধ্যে তিনি সিলেটের বহু লোকের কাছ থেকে লাখো-কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এছাড়াও শিপারের বিরুদ্দে আরো কয়েকটি মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে। অনুসন্ধানে আব্দুল আউয়াল চৌধুরী শিপারের প্রতারণা ও আত্মসাতের আরো বহু তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছে সূত্র।৷
উক্ত মামলার ঘটনাস্থল গত ৩০/০৯/২২ইং -সাক্ষীগনের জবানবন্দী রেকড নিয়ে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত করেন রমকান্ত দাস (বিপি) সাব ইন্সপেক্টর, কোতয়ালী মডেল থানা এসমপি।
প্রকাশ্যে আদালতে বিচারের প্রার্থনায় এজহারনামীয় আসামী আব্দুল আউয়াল চৌধুরী শিপার, লুৎফুল হায়দার চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৪০৬/৪২০ পেনাল কোড বিজ্ঞ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন ১০/১০/২০২২ ইংরেজী।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী ভুক্তভোগী খসরুল ইসলাম শামসুল জানান- পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। শিপার চৌধুরী তাকে ও তার কাছের আরেক ব্যবসায়ীকে বিদেশী একটি এনজিও কমিটির কর্তা ব্যক্তি বানিয়ে বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা আমদানির ব্যবস্থা করে দেবেন। এমন প্রলোভন দেখিয়ে আব্দুল আউয়াল চৌধুরী শিপার তার আরেক প্রতারক সহযোগীর মাধ্যমে তাদের দু’জনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়।
বিজ্ঞ আদালতে সুষ্ঠু বিচারের দাবী জানান মামলার বাদী শামসুল।