সিলেটে মোহনা টিভির পরিচয়ে শিপারের প্রতারণার ফাঁদ ! কমিশনার বরাবর অভিযোগ দায়ের

0
435
ক্রাইম রিপোর্টারঃ সিলেটে মোহনা টিভির পরিচয়ে শিপার চৌধুরীর ডিজিটাল কায়দায় প্রতারণা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙ্গিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে এসেছে। কানাইঘাট থানার ঝিঙ্গাবাড়ি এলাকার আব্দুল মালিকের পুত্র মোহনা টিভির সিলেট ব্যুরো প্রধান শিপার চৌধুরীর বিরুদ্ধে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার বরাবর প্রায় দশ লক্ষ্য টাকা ডিজিটাল কায়দায় আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন বন্দরবাজার রংমহল টাওয়ারের এক ব্যবসায়ী।
জানা গেছে- গত বুধবার (১লা ডিসেম্বর) সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর এ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী গোয়াইনঘাট থানার জাতুগ্রাম এলাকার আজিজুর রহমানের পুত্র খসরুল ইসলাম শামসুল। অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে- ভুক্তভোগী বন্দরবাজার রংমহল টাওয়ারের একজন কাপড়ের ব্যবসায়ী। আর কাপড় কেনাকাটার মাধ্যমেই প্রতারক শিপার চৌধুরীর সাথে তার প্রথম পরিচয় হয়। তার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার বেশ কয়েকদিন পর প্রতারক শিপার চৌধুরী তাকে বিভিন্ন সময়ে বহু বিদেশী এনজিও’র প্রলোভন দেখিয়ে অনেক সময় বড় অংকে টাকা বিনিয়োগ করতে কুপরামর্শ দেয়। প্রতারকের এই কুপরামর্শে তিনি সম্মতি জানালে বৎসরখানেক তাকে বহু এনজিও’র প্রোফাইল ল্যাপটপের মাধ্যমে দেখিয়ে ও তাকে প্রতারক শিপার ঢাকায় নিয়ে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করে। পরে “ডিসেবল রিহ্যাবিলিটেশন এনডেভর এন্ড মুভমেন্ট” (ড্রিম) নামক এনজিও সংস্থার বিবিধ কার্যাবলী দেখিয়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীকে প্রতিষ্ঠানের সহ-সভাপতি পদ নিতে প্ররোচিত করে এবং তাকে অর্থ বিনিয়োগ করতে বলে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীকে কোটি কোটি টাকার স্বপ্ন দেখিয়ে তাকে তার ধোকায় ফেলে নগদ নয় লক্ষ চুয়াত্তর হাজার (৯,৭৪,০০০/=) টাকা তার নিকট হইতে হাতিয়ে নেয় প্রতারক শিপার চৌধুরী।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী যে এই ডিজিটাল প্রতারকের টার্গেট ছিলেন তিনি টাকা লেনদেনের পরে তা টের পান। এই ভুক্তভোগীর মত আরো অনেকেই এই প্রতারকের ডিজিটাল প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী অভিযোগে আরো উল্লেখ করেন- তার পাশ্ববর্তী অন্য আরেকজন ব্যবসায়ী ছাড়াও আরো অনেকের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রলোভনে প্রতারক শিপার বহু টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন। এরপর তিনি সাংবাদিক নামধারী প্রতারক শিপার চৌধুরীর নিকট তার দেয়া নগদ টাকাগুলো ফেরত চাইলে সে নিজেকে মোহনা টেলিভিশনের সিলেট ব্যুরো প্রধান পরিচয় দিয়ে তাকে ভয়ভীতি ও নানা রকমের হুমকি প্রদান করে এবং তার সাথে প্রসাশনের উর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তার সু-সম্পর্ক রয়েছে বলে ভয় দেখিয়ে এ বিষয়ে আইনের আশ্রয় নিতেও হুমকি প্রদর্শন করে।
এরপর ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী তার এলাকায় খুঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার লোভের থাবায় তার আপন ভাইও রক্ষা পায়নি। তাছাড়া সে বিভিন্ন মানুষকে বহু রকমের প্রলোভন দেখিয়ে কাউকে ব্যাংকে চাকুরী, কাউকে বিভিন্ন পত্রিকা ও টেলিভিশনে চাকুরী প্রতিনিধিত্ব দেয়ার নামে, আবার কাউকে আওয়ামীলীগের পদোন্নতি পাইয়ে দিতে বহু লোকজনের কাছ থেকে বিভিন্ন কায়দায় লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
শিপার চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত এই অভিযোগের বিত্তিতে অনুসন্ধানে নামে টিম ওঠে আসে শিপার চৌধুরীর মোহনা টেলিভিশনের পরিচয় প্রতারণার নানা কৌশল। দেখা গেছে- শাহপরান (রহ.) থানার পীরেরবাজার সাকিনস্থ পীরেচক এলাকার মৃত মানিক মিয়ার পুত্র জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সক্রিয় সদস্য ও ফেনসিডিলসহ নানা রকম একাধিক মামলার আসামী সাংবাদিক পরিচয়দাতা কামরুল ইসলাম জনির ব্যবহৃত নাম্বারবিহীন মোটরসাইকেলে মোহনা টেলিভিশনের স্টিকার লাগানো কিন্তু সে মোহনা টেলিভিশনের কোন দায়িত্বেও নয়। তবে তার কাছে এই স্টিকার বড় অংকের টাকার বিনিময়ে শিপার চৌধুরী বিক্রি করেছে বলে অনুসন্ধানে ওঠে আসে।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে- শিপারের সহযোগী (সাংবাদিক পরিচয়দাতা)
কামরুল ইসলাম (জনি) মোহনা টেলিভিশনের কোন কিছু না হয়েও শুধুমাত্র একটি স্টিকারের ক্ষমতাবলে নিজেকে মোহনা টেলিভিশনের সাংবাদিক পরিচয়ে রীতিমতো বহু মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে আসছে। আর এই চাঁদার ভাগবাটোয়ারা শিপার চৌধুরীও পাচ্ছেন বলে বিশ্বস্ত সুত্র তা নিশ্চিত করেছে। এই মোহনা টেলিভিশনের সাংবাদিক পরিচয়দাতা কামরুল ইসলাম (জনি) গেলও বছর রোজার ঈদের সময় জৈন্তাপুর থানার শুকবাড়ি বাজার এলাকার ঠাকুরের মাঠি গ্রামের এক কবিরাজের বাড়িতে গিয়ে তাকে ভুয়া কবিরাজ আখ্যায়িত করে তার বিরুদ্ধে মোহনা টেলিভিশনে সংবাদ প্রকাশ করবে না হয় থাকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে বলে জানায় সে। পরে মোহনা টেলিভিশনের সাংবাদিক ভেবে ভয়ে ওই কবিরাজ তাকে নগদ ২২ হাজার টাকা দেয় এবং পরবর্তী টাকা দেয়ার জন্য ৫ দিনের সময় নেয়। তারপর এই কবিরাজ খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে সে আসলে মোহনা টেলিভিশনের কিছুই নয়। নিদিষ্ট সময়ে সে বাকী টাকা আনার জন্য আবার ওই কবিরাজের বসতবাড়িতে গেলে কবিরাজ তাকে বেধে হালকা উত্তম, মাধ্যম দিলে বেরিয়ে আসতে শুরু হয় আসল সত্য।
তারপরও সে কবিরাজের হাতে-পায়ে ধরে তার কাছ থেকে আনা নগদ ২২ হাজার টাকা তার বাড়িতে থেকে আনিয়ে ফেরত দিয়ে এরকম ধোঁকাবাজি না করার শর্তে স্ট্যাম্পে সাক্ষর দিয়ে মুক্তি পায়। তবুও মোহনা টেলিভিশনের পরিচয়ে থেমে নেই তার চাঁদাবাজি। এ ব্যাপারে দায়েরকৃত অভিযোগকারী ভুক্তভোগী খসরুল ইসলাম শামসুলের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন- আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা এই সাংবাদিক নামধারী প্রতারকের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করুন। সে প্রতারণা করে তিল তিল করে জমানো আমার জীবনের শেষ সম্ভল এই টাকাগুলো কেঁড়ে নিলো। আপনারা আমার ওই টাকাগুলো ফেরত পেতে আমাকে সাহায্য করুন বলে আকুতি-মিনতি করে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন তিনি। সর্বশেষে তিনি সিলেটের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট এই ডিজিটাল প্রতারকের হাত তার মত হাজারো অসহায় মানুষকে রক্ষার জন্য আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here