মাসুদ লস্কর, স্টাফ রিপোর্টারঃ হবিগঞ্জের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায় দালাল নির্ভর এ অফিসে দালাল ছাড়া পাসপোর্ট করতে গেলেই ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়।
একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে সরজমিনে ঘুরে দেখা যায় টাকা না দিলে আবেদন পত্রের ফাইল নড়ে না।
মোঃ গাজী মিয়া মোল্লা নামের এক ভুক্তভোগী জানান, তিনি ৪০২৫ টাকা সরকারি ফি সোনালী ব্যাংক চালানে জমা দিয়ে ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের অনলাইনে আবেদন করেন, গত ফেব্রুয়ারী মাসের ৯ তারিখে। আবেদনের পর পাসপোর্ট আবেদন স্লিপে যার ডেলিভারি তারিখ উল্লেখ রয়েছে চলিত বচরের মার্চ মাসের ৩ তারিখে। অথচ অদ্যাবধি ২৭ অতিরিক্ত কার্য দিবসেও পাসপোর্ট পান নি তিনি। কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দালাল রা টাকা চাইলে আমি না দেওয়ায় ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছি। অফিসে কথা বলার এক ফাকে গাজী মিয়ার পাসপোর্ট ২৩ মার্চ ডি,এস,বি রিপোর্ট দাখিল হলেও এক সপ্তাহ ধরে panding quick printing দেখানো ও এত বিলম্বের কারন জানতে চাইলে তাতক্ষনিক হাতের ইশারায় পাসপোর্ট panding quick printing থেকে passport shift দেখায় এবং অফিস থেকে পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে সহায়তা করে। আগামী রবি/সোম বার ডেলিভারি নিতে বলেন।
এছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভোক্তভোগী জানান পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচাল (এডি’র) এর অফিস সহকারী নয়ন ও মোছাঃ লতিফ বেগম নামক ব্যক্তিরা বিভিন্ন অযুহাতে আবেদন কারীদের কাছে টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে আবেদনে ভুল আছে সংশোধন করে নিয়ে আসুন বলে ফাইল ফিরিয়ে দেয়, আর চাহিদা মত টাকা দিলে এই ফাইল’ই অটোমেটিক সঠিক হয়ে যায়। এ যেন এক কারিশমা “আলাউদ্দিন এর আশ্চর্য প্রদীপের মত”।
পাসপোর্ট অফিসের ভিতরে শামিম (১৯) নামক এক আবেদন কারী জানান তিনি ২৯ দিনেই পাসপোর্ট পেয়েছেন, তবে অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
তাছাড়া আবেদন জমা দিতে আসা শরিফা (২১), সুহেল (৩০) জিতু (৪১) জানান, রাত তিনটার সময় অফিসের সামনে লাইন ধরছি, কিন্তু সিরিয়াল পাইনি। কারন কি? জানতে চাইলে ওরা জানায়, রাতেই টাকার বিনীময়ে সিরিয়াল ঠিক হয়ে গেছে, আমরা টাকা না দেওয়াতে সিরিয়াল পাইনি, কাল আসতে বলছে। ভোক্তভোগীরা আরো জানায় প্রতিদিন ৩/৪ শত মানুষ লাইন ধরে আর আবেদন নেয় ১০০ জনের, তাও যারা টাকা দিবে শুধু তারাই ভাগ্যবান। না হলে আবার আগামী কাল। টাকা না দিলে আগামী কাল-ই কাল হয়ে যায়।
এদিকে সিরিয়াল লেখার মধ্যেও রয়েছে দুর্নীতির আখড়া, তার সাথে জড়িত রয়েছে আনসার সদস্যসহ কিছু দালাল চক্রের সদস্যরা। সিরিয়ালের জন্য গুনতে হয় ৫’শ থেকে হাজার টাকা। পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতির শেষ কোথায়? জানতে চায় সাধারণ জনতা।
পাসপোর্ট অফিসের দালালদের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য অফিসের সামনে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সিতে কথা বলে জানা যায় ৪০২৫ টাকার ব্যাংক ড্রাফট এর জন্য ৭৫০০/- টাকা দিতে হবে, কারণ জানতে চাইলে দালাল রা জানায় এডি ম্যাডাম আইরিন পারভীন ডালিয়া কে ১৮০০/= ( আঠার শত টাকা ) এবং লতিফা ম্যাডাম ,ও অফিস সহকারী নয়ন কে নাকি টাকা না দিলে আবেদন একসেপ্ট হয়না । না হলে ফাইল নড়বে না।
এ ব্যপারে জানতে হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের এডি আইরিন পারভীন ডালিয়া মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার কল করেও রেস্পন্স না পাওয়ায় ক্ষুদেবার্তা পাঠানোর পরও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে অফিসে গিয়ে লতিফা ম্যাডামের সাথে কথা বলতে চাইলে, তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কথা না বলে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
এমনি যদি হয় হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তদের আচার আচার-আচরণ তাহলে, সাধারণ মানুষের কি অবস্থা হবে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন হবিগঞ্জবাসী। অবিলম্বে যেন হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস কে দালাল ও দুর্নীতি মুক্ত করা হয়।