হযরত শাহসুফি সৈয়দ নাছিরুল হক মাছুম (রহঃ) এর জীবনীর একটি শিক্ষনীয় ঘটনা

0
354

মোজাদ্দেদে জামান হযরত শাহসুফি সৈয়দ নাছিরুল হক মাছুম (রহঃ) এর জীবনী থেকে নেয়া…শিক্ষনীয় ঘটনা

অনুলিখনেঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম ফয়সালঃ ১৯৮৬ঈসায়ী, তখন হুজুর একটি হাই স্কুলে কর্তব্যরত সহকারী শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। হঠাৎ স্কুলে ভিসিটর আসার কথা।উনিসহ আরেকজন সহকারী শিক্ষক মো.মাজদু মিয়া স্কুলে বি.এস.সি সার্টিফিকেট দাখিল করেন নাই। তাই সার্টিফিকেট উঠানোর জন্যে চট্টগ্রামে যাবেন বলে মহানগর এক্সপ্রেসে বি-বাড়িয়া থেকে দুটি টিকিট কাটলেন। যথাসময়ে দুজনেই ট্রেনে উঠলেন।
মো.মাজদু মিয়া তার টিকিট নাম্বারের সিটে বসলেন, কিন্তু হুজুরের টিকিটের নাম্বারের সাথে সিট এর মিল পাওয়া যাচ্ছিল না। মাজদু মিয়া হুজুরকে লক্ষ্য করে বললেন, “সাহেব! যেহেতু পাশের কয়েকটি সিট খালি আছে,আপনি একটিতে বসে পড়েন”। সাহেব এর উত্তরে বললেন, “যদিও খালি তবুও আরেকজনের সিটে আমি কি করে বসি, বলেন? এগুলো তো আমার জন্যে বরাদ্দ ছিল না।”। মাজদু মিয়া আগেই হুজুরের সততা সম্পর্কে জানতেন। এবার ভাবলেন যে হুজুর হক্ব মানুষ, তিনি বসবেন না। তাই এক প্রকার জোড় করে উনার টিকিট সাহেব কে দিয়ে বললেন, “এই টিকিট আপনি নেন, আর আপনার টিকিট আমায় দিয়ে দেন। এবার আপনার বসতে অসুবিধে হবে না। এরপরই কেবল হুজুর সিটে বসতে রাজী হয়েছিলেন।
বাকী চেয়ার খালি থাকায় মাজদু মিয়া হুজুর এর নিকট খালি সিটে বসার অনুমতি চাইলে, সাহেব সরাসরি অনুমতি ও দেন নাই। বলেছিলেন যে “এটা আপনার বুঝ, দেখেন কি করবেন”। যাইহোক, ফজর এর একটু আগে ট্রেন চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌছার পর দু’জন মসজিদে একটু বিশ্রাম নিয়ে নামায আদায় করে চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন।
উনাদের এক ছাত্র তখন আমানত শাহ হলে থাকত, সে উনাদের সাথে দেখা করে কন্ট্রোলার এর অফিসে নিয়ে যায়। কন্ট্রোলার তখনও আসেনি। এসিস্ট্যান্ট কন্ট্রোলার সাহেব এর সাথে সার্টিফিকেট এর ব্যাপারে ছাত্র দেখা করে এসে হুজুরকে লজ্জিত স্বরে বলে যে, “স্যার, উনি দিতে পারবেন। তবে ৫০০ টাকা চান”। এ কথা শুনে হুজুর এবং মাজদু মিয়া চুপ রইলেন। এক পর্যায়ে মাজদু মিয়া বললেন সবাই যেহেতু টাকা দিয়েই নেয়, আমাদের তো আর এমনি দিবে না। ঠিক আছে! বলে উনি রাজী হয়ে গেলেন। হুজুর কিছুই বললেন না। এরমধ্যে যোহরের নামাযের সময় হয়ে গেলে হুজুর নামাযে চলে গেলেন। নামায শেষে একটু অপেক্ষার পরই এসিস্টেন্ট কন্ট্রোলার সাহেব সার্টিফিকেটগুলি হুজুরের কাছে দিয়ে টাকা না নিয়েই বললেন, “আপনারা একটু অপেক্ষা করেন, আমি আসছি”।
হুজুর এবং মাজদু মিয়া সাহেব অপেক্ষা করতে লাগলেন। প্রায় আধঘণ্টা গড়িয়ে যায় কিন্তু এসিস্ট্যান্ট কন্ট্রোলার তো আসেন না। এক পর্যায়ে মাজদু মিয়া সাহেব বললেন, এটা তো ঘুষ হিসেবেই দেব। আসছেনা যখন আমরা চলেই যাই। হুজুর না করলেন, বললেন আমরা তো প্রতিজ্ঞা করলাম উনি আসার আগ পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব। কিভাবে যাই বলেন? প্রায় ৪৫ মিনিট পর উনি আসলেন, বিব্রত অবস্থা দুই হাত এবং মুখ ভেজা। এসেই হুজুরকে বলছেন “হুজুর মাফ করে দেন”। মাজদু মিয়া সাহেব একটু বিস্মিত হলেন। হুজুর বলছেন “আপনি কিছু করেন নাই, মাফ চাচ্ছেন কেন?” এর পরও উনি হুজুরকে ধরে বলেন আজ মাফ দিতেই হবে, এক পর্যায়ে বলে উঠলেন “আল্লাহর ওয়াস্তে মাফ করেন।” হুজুর বললেন, “আপনি কিছু করেন নাই, তবুও আল্লাহর ওয়াস্তে যখন বলছেন,যান মাফ করলাম”।মাফ পেয়ে উনার চেহারায় প্রশান্তি আসল উনি প্রস্থান করলেন। মাজদু মিয়া তখন কারামত আচ করতে পেরে কৌতূহলী হয়ে হুজুরকে জিজ্ঞেস করলেন, “মসজিদে কিছু বলে এসেছেন?”। হুজুর বললেন, “না, তবে একটি জিনিস আল্লাহর কাছে বলেছি, হে আল্লাহ! আমার বাবার ইজ্জতের খাতিরে ঘুষ দেয়া থেকে বাচাইও । ” (সুবাহান’আল্লাহ) ।।
হযরত শাহসুফি সৈয়দ নাছিরুল হক মাছুম (রহঃ) তিনি চট্রগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নাসির নগর উপজেলার ফান্দাউক গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন । 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here